পাকিস্তানের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ চার বছর পর লন্ডন থেকে শনিবার (২১ অক্টোবর) দেশে ফিরেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে জনসমর্থন তৈরির জন্য তিনি দেশে ফিরেছেন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে শনিবার দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে একটি বিশাল সমাবেশে বক্তৃতা করবেন তিনি।
শরীফ সম্প্রতি লন্ডন থেকে সৌদি আরব এবং সেখান থেকে দুবাই আসেন। সেখান থেকে ইসলামাবাদ রওনা হওয়ার আগে শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমি চার বছর পর পাকিস্তানে যাচ্ছি এবং আল্লাহর রহমতে আমি খুব খুশি।’
তিনি জানান, তিনি আশা করেছিলেন এই কয় বছরে দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন এবং এর দুই বছর পর ২০১৯ সালে তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করেন।
তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ভিডিওতে এসব তথ্য জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, আমি আল্লাহর উপর সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি ১৫০ বারেরও বেশি আদালতে হাজিরা দিয়েছেন।
২০১৯ সালে বুকে ব্যথার কথা বলায় তার উত্তরসূরি ইমরান খান তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেন। শরীফ পরে লন্ডনে তার অবস্থান দীর্ঘায়িত করে বলেছিলেন যে তার ডাক্তাররা তাকে দেশে ফেরার অনুমতি দিচ্ছে না। এরপর থেকে তিনি লন্ডনে পলাতক ছিলেন।
শরীফের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানকে আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার করা হয়।
একটি আদালত তাকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন।
দুবাইয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শরীফ বলেন, তিনি আশা করেন পাকিস্তান আবার উন্নয়নের পথে এগোতে পারবে। ‘আশার আলো এখনও টিকে আছে এবং আশাহত হওয়া উচিত নয়। আল্লাহর রহমতে আমরা পরিস্থিতি ঠিক করতে সক্ষম হয়েছি।’
পাকিস্তানের একটি ফেডারেল আদালত দুর্নীতির মামলায় শরীফকে কয়েক দিনের জামিন দিয়েছে। এর ফলে লন্ডন থেকে তার দেশে ফেরার পথ পরিষ্কার হয়েছে।
ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তটি শরীফ এবং তার দলের জন্য একটি বড় অর্জন।
তিনি দেশে ফিরে না আসায়, ২০২০ সালে ইসলামাবাদের একটি দুর্নীতিবিরোধী আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বৃহস্পতিবার একই আদালত সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন।
আরেকটি ফেডারেল আদালত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত শরীফকে জামিন দিয়েছেন এবং ততদিন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার থেকে সুরক্ষা দিয়েছেন।
শরিফকে ২০১৮ সালে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং লন্ডনে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি দুর্নীতির মামলায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ইমরান খানকে অপসারণের পর নওয়াজ শরীফের ভাই শেহবাজ শরীফ খানের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর খানের দল ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
শেহবাজ শরীফ দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হন। তবে তিনি পাকিস্তানকে খেলাপির হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। গত আগস্টে তার মেয়াদ শেষ হয়।
একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে এবং আগামী জানুয়ারিতে তারা ভোটগ্রহণ করবে।