পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের একটি মসজিদে চলতি সপ্তাহে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ এড়িয়ে হামলাকারী পুলিশের পোশাক পড়ে ছদ্মবেশে মসজিদের ঢুকে আত্মঘাতী হামলা চালায়।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশ প্রধান মোয়াজ্জাম জাহ আনসারি এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন যে বোমা হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং সোমবারের হামলার পিছনে থাকা নেটওয়ার্কের সদস্যদের গ্রেপ্তারের কাছাকাছি রয়েছে পুলিশ। এটিকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবেও উল্লেখ করেন আনসারি।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি পুলিশ সদস্যের শাহাদতের প্রতিশোধ নেব।’
বিস্ফোরণে ৫০ বছরের পুরনো মসজিদের ছাদ ধসে পড়ে ১০১ জন নিহত হয়। যাদের বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য। আহত হয়েছেন আরও আড়াইশ’ জন।
পেশোয়ারে নাগরিক সমাজ আয়োজিত শান্তি মিছিলে কয়েক ডজন পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের সুরক্ষার দাবিতে যোগ দেয়ার এক বিরল পদক্ষেপের একদিন পর আনসারি একথা বললেন।
বোমা হামলার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ টিটিপি নামে পরিচিত পাকিস্তানি তালেবান গোষ্ঠিকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা এই হামলা চালিয়েছে এবং তারা প্রতিবেশী আফগান ভূখণ্ড থেকে কাজ করছে। পাকিস্তান চায়, আফগান তালেবানরা টিটিপি গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
বোমা হামলার কিছুক্ষণ পর একজন টিটিপি কমান্ডার দায় স্বীকার করে। কিন্তু হামলার ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে গোষ্ঠীর প্রধান মুখপাত্র টিটিপির বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, মসজিদে হামলা করা তাদের নীতি নয়।
বুধবার তালেবান-নিযুক্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি অবশ্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে আফগানিস্তানকে দোষারোপ না করে তাদের দেশে জঙ্গি সহিংসতার কারণ খুঁজতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত ২০, আহত ৯৬
সোমবারের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য আফগান মাটি ব্যবহার করছে বলে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমির খান মুত্তাকি এই মন্তব্য করেছেন।
আত্মঘাতী হামলার সময় মসজিদে ৩০০ জনের বেশি সুন্নি মুসল্লি প্রার্থনা করছিলেন এবং আরও অনেকে মসজিদের কাছে আসছিলেন।
আনসারি বলেন, হামলাকারীকে তল্লাশি করা হয়নি কারণ রক্ষীরা ধরে নিয়েছিল যে সে তাদের একজন সহকর্মী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্বীকার করি যে এটি একটি নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল এবং আমরা এর দায় নিচ্ছি।’
বোমা হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ পেশোয়ারের একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন এবং হামলার পিছনে যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাকিস্তানে বেশিরভাগই সুন্নি মুসলিম। নভেম্বর থেকে পাকিস্তানি তালেবান সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শেষ করার পর থেকে জঙ্গি হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২১ সালের আগস্টে প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর থেকে পাকিস্তানে সহিংসতা বেড়েছে। ২০ বছরের যুদ্ধের পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে।
টিটিপি আফগান তালেবানদের থেকে আলাদা কিন্তু একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৮