উত্তাপ, সহিংসতা ও রাজনৈতিক মেরুকরণের উত্তেজনার মধ্য দিয়ে রবিবার মেক্সিকোতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে মেক্সিকো প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ছাড়া দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র ক্লাউদিয়া শাইনবাউম ভোটে জিতলেও তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস মানুয়েল লোপেস ওব্রাদরের মতো প্রশ্নাতীত সমর্থন পাবেন না। শাইনবাউম ও ওব্রাদর উভয়ই ক্ষমতাসীন মোরেনা পার্টির নেতা।
২০১৮ সালে লোপেস ওব্রাদরের জয়ের পর জনতার মাঝে যে উল্লাস দেখা যায়, জনমত জরিপে শাইনবাউম এগিয়ে থাকলেও মেক্সিকো সিটির ঔপনিবেশিক যুগের প্রধান প্লাজা জোকালোতে সে ধরনের উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: মেক্সিকোয় ঝড়ের কবলে নির্বাচনি সমাবেশ, ৯ জন নিহত
ফের্নান্দো ফের্নান্দেস মেক্সিকো সিটির ২৮ বছর বয়সী একজন শেফ। শাইনবাউমের সমর্থকদের তুলনামূলক ছোট একটি মিছিলে ছিলেন তিনি। প্রাথমিক গণনায় শাইনবাউম জিতেছেন দেখা গেলেও তাতে সমস্যা দেখা দেয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
ফের্নান্দেস বলেন, ‘ক্লাউদিয়াকে নিশ্চিন্তে ভোট দেওয়া যায়। ক্ষমতায় থাকাকালে লোপেস ওব্রাদর গ্যাসের দাম, অপরাধ ও মাদক পাচারের মতো বিষয় কমাতে পারতেন। তবে তিনি চেষ্টাই করেননি। এসব বিষয়ে উন্নতি করতে পারেন ক্লাউদিয়া।’
মিছিল থেকে ইতশেল রব্লেদো নামের আরেক যুবক বলেন, ‘লোপেস ওব্রাদর যা করেননি, শাইনবাউম তা-ই করবে বলে আশা করছি। এক্ষেত্রে ক্লাউদিয়াকে যা করতে হবে, তা হলো প্রতিটি ক্ষেত্রে পেশাদারদের নিয়োজিত করা।’
ক্লাউদিয়ার প্রধান বিরোধী প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও সাবেক সিনেটর শোচিত গালভেস। জনগণের নিরাপত্তা ও সংগঠিত অপরাধ দমনে আরও কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।
প্রায় ১০ কোটি ভোটার রবিবার ভোট দেওয়ার কথা ছিল। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ভোটের হার কিছুটা কম ছিল বলে মনে হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে দেশটির ৩২ রাজ্যের ৯টিতে গভর্নর নির্বাচনের জন্যও ভোট দেন ভোটাররা। একইসঙ্গে হাজারো মেয়র পদ ও অন্যান্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও নির্বাচন করছেন তারা। ফলে এটি দেশটির সবচেয়ে বড় ভোটগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেক্সিকোর দক্ষিণে সিটি হলে মাদক চক্রের হামলায় ২০ জন নিহত
সদ্য শেষ হওয়া এই নির্বাচনকে লোপেস ওব্রাদরের ওপর গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি সামাজিক কর্মসূচির প্রসার ঘটালেও মাদক ও সহিংসতা দমনে ব্যর্থ হয়েছেন। ওব্রাদর যা করে গিয়েছেন, তার পর থেকে ক্লাউদিয়া শুরু করবেন বলে বিশ্বাস তার দলের সমর্থকদের।
শাইনবাউমও লোপেস ওব্রাদরের সমস্ত নীতি অক্ষুণ্ন রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার মধ্যে সর্বজনীন পেনশন ও যুবকদের শিক্ষানবিশ কর্মকাণ্ডে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার মতো প্রকল্প রয়েছে।
অন্যদিকে, আদিবাসী বাবার সন্তান, শহরের রাস্তায় স্ন্যাকস বিক্রি করে উঠে আসা গালভেস এখন টেক ফার্মের মালিক। প্রধান বিরোধী দলগুলোর জোটের হয়ে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য লড়ছেন তিনি। মাদক মাফিয়াদের দমন করার পরিবর্তে ওব্রাদর ‘গুলি নয়’ নীতি ধারণ করলে গত বছর সিনেট থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। নির্বাচনি ইশতেহারে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এবারের ভোটে ভোটারদের মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মাদক মাফিয়াদের সহিংসতা ও মেক্সিকোর মধ্যবর্তী অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা।
উল্লেখ্য, ৩২টি গভর্নর পদের ২৩টিতেই বর্তমানে নিজেদের প্রার্থী রয়েছে মোরেনা পার্টির। মেক্সিকোর কংগ্রেসের উভয় কক্ষেও দলটির সংখ্যাগরিষ্টতা রয়েছে।
সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদের দুই প্রার্থীই নারী। আর তৃতীয় প্রার্থী হোর্গে আলভারেস মায়নেস জনমত জরিপে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এবারের ভোটে প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি পেতে যাচ্ছে মেক্সিকো।