পাপুয়া নিউগিনিতে ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭০ জন ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
রবিবার (২৬ মে) দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটিতে জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থার মিশনের প্রধান সেরহান আকটোপ্রাক বলেন, ইয়াম্বালি গ্রাম ও এনগা প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী শুক্রবারের ভূমিধসে দেড় শতাধিক বাড়ি চাপা পড়েছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) আকটোপ্রাক জানান, এই মুহূর্তে ৬৭০ জনেরও বেশি মানুষ মাটির নিচে তলিয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন তারা।
শুক্রবার স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন প্রাথমিকভাবে মৃতের সংখ্যা ১০০ বা তারও বেশি হতে পারে। রবিবারের মধ্যে মাত্র ৫টি মৃতদেহ এবং অন্য একটি মরদেহের একটি পা উদ্ধার করা হয়।
জীবিতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে সেখানে অবস্থানরত জরুরি সেবাদানকারীরা।
অন্যদিকে আরও আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন আছে কি না সেটি বিবেচনা করে দেখছে দেশটির সরকার।
উদ্ধারকারীরা মাটির নিচে এবং ধ্বংসস্তূপের ৬ থেকে ৮ মিটার (২০ থেকে ২৬ ফুট) গভীরে জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে বলে জানান আকটোপ্রাক।
তিনি বলেন, 'কষ্ট ও শোকে ভারাক্রান্ত মানুষ এই বিষয় মেনে নিচ্ছে।’
আকটোপ্রাক আরও বলেন, 'ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে কাজ করা খুবই বিপজ্জনক এবং এখনো ভূমিধস হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: পাপুয়া নিউগিনিতে ভূমিধসে শতাধিক মৃত্যুর দাবি
সরকারি কর্তৃপক্ষ নিরাপদ স্থানে তিন থেকে চারটি ফুটবল মাঠের সমান এলাকা জুড়ে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রধান মহাসড়ক কেটেছে।
এদিকে প্রাদেশিক রাজধানী ওয়াবাগ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে বিধ্বস্ত তাম্বিতানিস গ্রামে যাওয়ার পথে খাবার, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বহনকারী গাড়িগুলো উপজাতিদের লড়াইয়ের মুখে পড়ার হুমকিতে রয়েছে। যদিও পাপুয়া নিউগিনির সেনারা কনভয়গুলো পাহারা দিচ্ছে।
ভূমিধসের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধের জেরে শনিবার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৮ জন নিহত হয়। এ লড়াইয়ে প্রায় ৩০টি বাড়িঘর ও ৫টি দোকান পুড়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় কর্মকর্তারা।
আকটোপ্রাক বলেন, তিনি আশা করেননি যে উপজাতীয় যোদ্ধারা ত্রাণবাহী গাড়িগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে তবে সুবিধাবাদী অপরাধীরা চলমান বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে এ কাজ করতেও পারে।
তিনি বলেন, ‘গাড়ি ছিনতাই বা ডাকাতির জন্য হামলা হতে পারে। তবে শুধু কর্মীদের সুরক্ষার বিষয় নয় বরং যে ত্রাণগুলো নিয়ে আসা হয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে সেগুলো চুরির সম্ভাবনাও রয়েছে।’
দীর্ঘসময় ধরে চলা এই উপজাতীয় যুদ্ধ সরকারি অনুমানের ওপর সন্দেহ তৈরি করে কেন না মুঙ্গালো পর্বতের যে অংশের ধস হয়েছে সেখানের গ্রামটিতে প্রায় ৪ হাজার মানুষ বাস করত।
মানবাধিকার সংস্থা কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাস্টিন ম্যাকমাহন বলেন, বেঁচে যাওয়াদের খাবার, পানি ও আশ্রয়ের পাশাপাশি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া বেশি জরুরি। সেনাবাহিনী এ লক্ষ্যে কাজ করছে।
রবিবারের মধ্যে আহত ও নিখোঁজদের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। শনিবার এক শিশুসহ ৭ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে জানালেও তাদের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি স্থানীয় কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: পাপুয়া নিউগিনিতে উপজাতিদের সহিংসতায় ৫৩ জন নিহত
কর্মকর্তারা আরও জানান, বাড়িঘর, বেশকিছু ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, একটি গেস্ট হাউস, স্কুল ও গ্যাস স্টেশনের পাশাপাশি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোও ভূমি ধসে চাপা পড়েছে।
ওই অঞ্চলে অন্যান্য স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে উল্লেখ করে ম্যাকমাহন জানান, প্রাদেশিক সরকার স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাচ্ছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্মী মোতায়েন করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু সাহায্য পাওয়া গেলেও এটি এমন বিস্তৃত এলাকা যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। বিপর্যয়ের প্রভাব আসলেই বেশ বিস্তৃত এলাকাজুড়ে।’
পাপুয়া নিউগিনি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে হলেও বিধ্বস্ত ওয়াবাগ গ্রাম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার মিটার অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার ৬০০ ফুট উপরে যেখানে তাপমাত্রা যথেষ্ট শীতল।
রবিবার পাপুয়া নিউগিনির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিলি জোসেফ এবং সরকারের জাতীয় দুর্যোগ কেন্দ্রের পরিচালক লাসো মানা হেলিকপ্টারযোগে গ্রামটি পরিদর্শনে যান।
আনুষ্ঠানিকভাবে আরও আন্তর্জাতিক সহায়তার অনুরোধ জানানোর ব্যাপারে সরকার মঙ্গলবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থার মিশনের প্রধান আকটোপ্রাক।
এই বিপর্যয়ের মুহূর্তে দেশটিকে সহায়তা করতে কিছু দেশ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাপুয়া নিউগিনির নিকটতম প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক সহায়তা সরবরাহকারী অস্ট্রেলিয়া।
পাপুয়া নিউগিনি একটি বৈচিত্র্যময়, উন্নয়নশীল দেশ যেখানে ৮০০ ভাষা এবং ১০ মিলিয়ন মানুষ বাস করে যাদের বেশিরভাগই কৃষক।