যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির ইহুদি জাদুঘরের (ক্যাপিটাল জুইশ মিউজিয়াম) কাছে এ ঘটনা ঘটে।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ক্রিস্টি নোম। তিনি জানান, এ হামলার ঘটনা ঘটেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ওয়াশিংটন কার্যালয়ের একেবারে কাছাকাছি এলাকায়।
ঘটনার পর দেশটির মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান পামেলা স্মিথ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহতদের মধ্যে একজন নারী ও অন্যজন পুরুষ। তারা ক্যাপিটাল জুইশ মিউজিয়ামে একটি অনুষ্ঠান শেষে বের হচ্ছিলেন। সে সময় হামলাকারী চারজনের একটি দলের দিকে গুলি চালান।
তিনি আরও জানান, হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম ইলিয়াস রদ্রিগেস (৩০), তিনি শিকাগোতে বসবাস করেন। হামলার আগে তাকে জাদুঘরের বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা যায়। গুলির করার পর হামলাকারী জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশ করলে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে আটক করে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
সে সময় রদ্রিগেস ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন বলেও জানান পামেলা। পাশাপাশি ওই স্থানে বর্তমানে আর কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলেও স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
এ হামলার দুই প্রত্যক্ষদর্শী ইয়োনি কালিন ও কেটি কালিশার জানান, যখন গুলির শব্দ হয়, তখন তারা জাদুঘরের ভেতরে ছিলেন। এ সময় চোখেমুখে আতঙ্ক মাখা এক ব্যক্তি জাদুঘরের ভেতরে ঢোকেন।
কালিন বলেন, ‘উপস্থিতদের কয়েকজন তাকে (ইলিয়াস) সাহায্য করতে এগিয়ে যান এবং পানি পান করতেও দেন। আমরা ভেবেছিলাম যে তিনিও বোধহয় আততায়ীর গুলিতে ভয় পেয়েছেন; বুঝতেই পারিনি যে তিনিই হামলাকারী।
তিনি বলেন, “পুলিশ ভেতরে আসলে ওই ব্যক্তি একটি লাল কেফিয়াহ (বিশেষ ধরনের স্কার্ফ) বের করে বারবার ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।”
তিনি আরও বলেন, ‘গাজা ও ইসরায়েলের মানুষের পাশে কীভাবে দাঁড়াতে পারি, কীভাবে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা একসঙ্গে কাজ করে নির্দোষ মানুষদের সাহায্য করতে পারে, তা নিয়েই (জাদুঘরে) অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অথচ এই অনুষ্ঠানেই সে ঠাণ্ডা মাথায় দুজনকে হত্যা করল!’
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, তিনি ওয়াশিংটনের বর্তমান অ্যাটর্নি ও সাবেক বিচারক জেনিন পিরোর সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি অফিস এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে বলে জানান তিনি।
ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক এক্সে পোস্টে বলেন, ‘এই বর্বর হত্যাকাণ্ড বন্ধ হতে হবে, এখনই তা করতে হবে! ঘৃণা ও উগ্রবাদ যুক্তরাষ্ট্রে ঠাঁই পাবে না।’ এ সময় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান তিনি।
এদিকে, এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। এক্স পোস্টে এই ঘটনাকে তিনি ‘একটি বর্বর ও ইহুদি-বিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আামদের বিশ্বাস, এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। বিশ্বের যেখানেই হোক, ইসরায়েল তার নাগরিক ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সুরক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে থাকবে।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত
এ বিষয়ে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগ বলেন, ‘ওয়াশিংটনে যা ঘটেছে তাতে আমি ভীষণভাবে ব্যথিত। এটি ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের জঘন্য বহির্প্রকাশ, যা আমাদের দুই তরুণ কর্মীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।’ এক্স পোস্টে নিহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।