দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৬০টি বাড়ি পুড়ে গেছে। শুক্রবার রাজধানী সিউলের গুরিয়ং গ্রামে লাগা এ আগুন প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে দমকলকর্মীরা। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সিউলের গাংনাম জেলার দমকল বিভাগের একজন কর্মকর্তা শিন ইয়ং-হো বলেছেন, উদ্ধারকর্মীরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তল্লাশি করেছে, সব বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: চীনে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৩৮
এদিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগার পর ৮০০ জনেরও বেশি দমকলকর্মী, পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং দুর্ঘটনাকবলিতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ করে।
৬৬ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা কিম সুং-হান দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, ‘চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে এ ধরনের দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে?’
উল্লেখ্য, দেশটির সবচেয়ে বড় ছুটির একটি হলো চান্দ্র নববর্ষ এবং আগামী শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ উপলক্ষে ছুটি থাকবে।
কিম বলেন, ‘আর কিছু বের করতে না পেরে, আমি শুধু এই পোশাকেই বাড়ি থেকে ছুটে বেড়িয়েছি।’
গ্রামটির একজন নেতা লি উন-চেওল বলেছেন, বাসিন্দারা দ্রুত অন্যদেরকে আগুনের বিষয়ে সতর্ক করতে সক্ষম হয়েছিল এবং দমকলকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লোকেদের সন্ধান করছে এবং তাদের সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে।
লি ওয়াইটিএন নিউজ চ্যানেলকে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।’
তবে আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি।
গাংনাম জেলা অফিসের একজন কর্মকর্তা কিম আহ-রিউম বলেছেন, প্রায় ৫০০ জন বাসিন্দাকে একটি স্কুল ও জিমসহ আশেপাশের স্থাপনাগুলোতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন যে, ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই বাড়িতে ফিরতে পারবে বলে আশা করছিল। যাদের বাড়ি ধ্বংস হয়েছে বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কমপক্ষে ৪৫ জনকে অস্থায়ীভাবে একটি হোটেলে থাকতে হবে। পুড়ে যাওয়া ৬০টি বাড়ির মধ্যে কয়েকটি অবশ্য খালি ছিল।
আগুনের খবর পেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বর্তমানে তিনি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে সফররত।
তার মুখপাত্র কিম ইউন-হে বলেছেন, দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা কমানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
২০২২ সালের অক্টোবরে সিউলের একটি সংকীর্ণ রাস্তায় ভিড়ে ঠেলাঠেলিতে কমপক্ষে ১৬০ জন মারা যান। এটি গত এক দশকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্বল পরিকল্পনার জন্য মারাত্মক এই দুর্ঘটনা ঘটে।
কেননা দুই বছর পর হ্যালোইন উদযাপকদের বিশাল সমাবেশের কথা জেনেও, কর্তৃপক্ষ ভিড় নিয়ন্ত্রণের মৌলিক ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়।
গুরিয়ং গ্রাম, সিউলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কিছু এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত একটি অবৈধ ছাউনি। যা সুউচ্চ উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট এবং বিলাসবহুল শপিং মলের পাশেই অবস্থিত। এটি দীর্ঘকাল ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদ্যমান আয় বৈষম্যের প্রতীক।
সহজেই আগুনে পোড়ে এমন উপকরণ দিয়ে তৈরি হওয়ায় পাহাড়ের পাশের গ্রামটি কয়েক বছর ধরে প্রায়ই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গত মার্চ মাসে আগুনে ১১টি বাড়ি পুড়ে গিয়েছিল এবং বন্যার কারণে গত আগস্টে প্রায় ১০০ জন লোককে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল।
গ্রামটিতে প্রায় ৬৭০টি বাড়ি রয়েছে, তবে সবগুলোতে মানুষ বাস করে না।
আরও পড়ুন: রাশিয়ায় অবৈধ আশ্রয়কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডে ২২ জনের মৃত্যু