হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তহবিল থেকে কাঁটছাট করা প্রায় ২৬০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ফেরত দিতে ট্রাম্প প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক। হোয়াইট হাউসের সঙ্গে চলমান এই রায় আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য এটি একটি বড় জয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বোস্টনের ডিস্ট্রিক্ট বিচারক অ্যালিসন ব্যুরোজ এই আদেশ দিয়েছেন।
ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে হার্ভার্ডের গবেষণা তহবিল আটকে দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে দেওয়া ফেডারেল তহবিলের সঙ্গে এ ধরনের বৈষম্যের খুব সামান্যই সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন বিচারক আলিসন।
তার ভাষ্যে, নথিপত্র থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে ইহুদিবিদ্বেষের অজুহাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর লক্ষ্যভিত্তিক ও মতাদর্শ-প্রণোদিত আক্রমণ চালানো হয়েছে।
বিচারক আরও বলেন, ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়াই করতে হবে, সেই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও রক্ষা করতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যখন ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ চলেছে, সে সময় ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে হাভার্ড কর্তৃপক্ষ। এর জেরেই বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে বেশিরভাগ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে নিজেদের ধারণার কথা জানিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
এর জেরে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করা, করছাড় সুবিধা বাতিলসহ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সুযোগও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন সরকার। পরে বিচারক অ্যালিসন সেই সিদ্ধান্তও স্থগিত করে দেন।
বিচারকের নির্দেশে ফেডারেল অর্থ ফেরত পেলে হার্ভার্ডের ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম ও শত শত প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আসলেই এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র লিজ হুস্টন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে আপিল করা হবে। বিচারক অ্যালিসনকে তিনি ‘ওবামার আমলে নিয়োগ পাওয়া’ বিচারক বলেও অভিহিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় যে তাদের শিক্ষার্থীদের হয়রানি থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বহু বছর ধরেই ক্যাম্পাসে বৈষম্য চলতে দিয়েছে, তা যেকোনো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের কাছেই পরিষ্কার। হার্ভার্ডের করদাতাদের অর্থ পাওয়ার কোনো সাংবিধানিক অধিকার নেই।
এদিকে, বিচারকের এই রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার লড়াইকে বৈধতা দিলেও সামনের দিনগুলোতে নতুন লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার।
তবে আদালতের বাইরেও ট্রাম্প প্রশাসন ও হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ একটি সমঝোতায় আসতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি হলে আর তদন্তের প্রয়োজন পড়বে না।
যদিও এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি, তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান হাভার্ড অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলার দিক।
মামলার হাভার্ড অভিযোগ করে, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল গত বসন্তে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরেুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য চান দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোম। কিন্তু তার অনুরোধ রাখতে ব্যর্থ হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়েছে।
অ্যালান গারবার ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কী পড়াবে, কাকে ভর্তি ও নিয়োগ দেবে, কিংবা কোন ক্ষেত্রে গবেষণা চালাবে— তা কোনো সরকারই নির্ধারণ করে দিতে পারে না।
বিচারক অ্যালিসনের ভাষ্যে, হাভার্ডের তহবিল কাঁটছাট করা হলো সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে দেওয়া মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হবে। কারণ এখন ইহুদিদের নামে বাকস্বাধীনতা সীমিত করা হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্য অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর বাকস্বাধীনতাও সমানভাবে সীমিত করা যেতে পারে।