২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি হয়েছে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশ করা তথ্যে উঠে এসেছে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ১১ মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময় রপ্তানি ছিল ৪২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। এতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমকি ৬৭ শতাংশ।
চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে রপ্তানি একটানা কমে যাওয়ার ফলে বিগত ১১ মাসের গড় রপ্তানিতে মন্দাভাব সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ন্যায্য-ন্যূনতম মূল্য ও সমন্বিত আচরণবিধি প্রণয়নের আহ্বান বিজিএমই সভাপতির
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানিয়েছেন, ১১ মাসে আমাদের পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছে।
রুবেল আরও বলেন, গেল মে মাসে নীটওয়্যার পণ্যের প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৭৫ কমেছে এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমেছে।
সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি এবং তা নিয়ন্ত্রণে সুদহার বৃদ্ধির ফলে ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। ফলে পোশাকের খুচরা বিক্রয় ও আমদানি কমেছে (২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ইউরোপের কমেছে ১২ দশমিক ৮৪)। পাশাপাশি ইউনিট প্রতি পণ্যের উল্লেখযোগ্য দরপতন (২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আমাদের প্রধান পণ্যের দরপতন হয়েছে ৮ থেকে ১৮ শতাংশ) রপ্তানি কমার অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন: পোশাককর্মীদের কল্যাণে বিজিএমইএর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ইন্ডাস্ট্রিঅল
বিশেষ করে নূন্যতম মজুরি বৃ্দ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ব্যাংক সুদ সিঙ্গেল ডিজিট থেকে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হওয়া, এবং এই সংকটময় সময়ে নগদ সহায়তা কমিয়ে আনার ফলে শিল্প প্রতিযোগি সক্ষমতার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে। তার কিছুটা প্রতিফলন রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ফুটে উঠেছে।
উল্লেখ্য যে, পোশাকখাতকে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। আমরা একদিকে এনবিআর, বন্দর ও ব্যাংকিং সংক্রান্ত জটিলতা মোকাবিলা করছি। অন্যদিকে শিল্পাঞ্চলের বাইরে নতুন কোন কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যাংক ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা আমরা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগ ও রপ্তানি আরও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০৩০ সাল নাগাদ আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি এবং সেই অনুযায়ী উদ্যেক্তারা নতুন পণ্যে বিনিয়োগ করছেন এবং নতুন বাজার তৈরিতে তৎপর আছেন। আমরা বিশ্বাস করি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রপ্তানি আয় ও অর্থনীতির কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধির স্বার্থে সরকার পোশাক খাতের জন্য বিকল্প ইনসেনটিভ প্রবর্তনের আগ পর্যন্ত চলমান সকল সহায়তা অব্যাহত রাখবে এবং এর মাধ্যমে শিল্পের উৎকর্ষতা ও টেকসই হওয়ার পথটি মসৃণ করতে সহযোগিতা করবে।
আরও পড়ুন: ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন দিতে মানবাধিকার কমিশনের আহ্বান