বিজনেস ইনিশিয়েভি লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (আইটিসি)-শি ট্রেড ইনিশিয়েটিভসের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার আয়োজিত ‘ডেফিনেশন অব কটেজ, মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনসালটেশন সেশনে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল প্রয়োজন, ধরন ও আকারের ভিত্তিতে শিল্প খাতগুলোকে পৃথকীকরণ ও তাদের জন্য সঠিক নীতি গ্রহণ, যাতে করে আর্থিক ও অন্যান্য খাত-ভিত্তিক সহায়তাগুলো সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়।
অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আইটিসির এসএমই কম্পিটিটিভনেস আউটলুকের কো-অর্ডিনেটর অর্থনীতিবিদ ড. ওলা সলেডার এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গেনাইজেশনের (আইএলও) ঊর্ধ্বতন পরিসংখ্যানবিদ মাইকেল ফ্রশ।
বৈঠকে মূল প্রেজেন্টেশন দেন বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম।
আরও পড়ুন: সরকারি ক্রয়ে এসএমই খাতের জন্য কোটা নির্ধারণের চেষ্টা চলছে: শিল্পমন্ত্রী
তিনি বলেন, দেশের মোট ব্যবসায় উদ্যোগের ৯৯ দশমিক ৮৪ শতাংশই সিএমএসএমই খাতের। এতে বোঝা যায় দেশের অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি।
তিনি দেখান, বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কটেজ ও মাইক্রো উদ্যোগুলো একই, কেননা তাদের বেশির ভাগই ম্যানুফেকচারিং ও খুচরা ব্যবসায় সম্পৃক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই অনানুষ্ঠানিক খাতের এবং এরা সাধারণত বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের সহায়ক ব্যবসা হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে বেশির ভাগ মাঝারি উদ্যোক্তা ম্যানুফেকচারিং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ব্যবসার দিক থেকে একই প্রকৃতির হওয়ায় মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নীতি সহায়তা একই হওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে বড় ও মাঝারি খাতের জন্য নীতি সহায়তা হবে তাদের ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, বেশির ভাগ দেশই সিএমএসএমইর পরিবর্তে এমএসএমই ব্যবহার করে থাকে।
তিনি জানান, নতুন কোম্পানি আইনের সংশোধনীতে ‘একক ব্যাক্তির কোম্পানি’কে (ওপিসি) যুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে এসএমইরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আনুষ্ঠানিক খাতে চলে যাবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কর আরোপের ব্যবস্থাও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সংজ্ঞার সাথে সমন্বয় রেখে ওপিসির জন্য আনা কোম্পানির আইনের সংশোধনীতে পরিশোধিত মূলধনের সীমা ও টার্নওভারকে যুক্ত বরা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ প্রাপ্তির শর্তে কিছু ঘাটতি থাকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাঝারি শিল্পই এখান থেকে সুবিধা পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: রপ্তানি বহুমুখী করতে পিআইএফআইসি কর্মসূচি চালু হয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
উপস্থাপনার শেষে তিনি বলেন, ক্যাটাগরির মানদণ্ড নির্ধারণ জরুরি, একই সঙ্গে ক্রস কাটিং বিশ্লেষণের জন্য এমএসএমইর একটি সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণও গুরুত্বপূর্ণ।
আইএলওর ঊর্ধ্বতন পরিসংখ্যানবিদ মাইকেল ফ্রশ বলেন, আইএলওর কাছে এসএমইর কোনো অফিসিয়াল পরিসংখ্যানগত সংজ্ঞা নেই। যদিও ক্ষুদ্র ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের প্রতি আইএলওর বিশেষ মনোযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, বিশ্বের মোট কর্মসংস্থানের ৬১ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে হচ্ছে।
আইটিসির বিশেষজ্ঞ ওলা সলেডার বলেন, সিএমএসএমই সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে শর্তাদি রয়েছে সেগুলো অন্যান্য দেশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সিএমএসএমইর পরিবর্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমএসএমই ব্যবহার করে থাকে। সংজ্ঞার সমন্বয়বিধান নির্ভর করে দেশের ধরন ও প্রকৃতির ওপর।
আরও পড়ুন: ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বাকী খলিলী বলেন, কুটির এবং মাইক্রো শিল্পগুলো একত্রিত হয়ে গেলে ক্ষুদ্র শিল্পের মোট শতাংশ সার্বিক শিল্পের ৯৯ শতাংশ হবে। তবে কটেজ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে তাই এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করা কঠিন হতে পারে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সলিমুল্লাহ জানান, শিল্প মন্ত্রণালয় একটি নতুন শিল্প নীতিমালা প্রণয়নের পথে এবং সিএমএসএমইর সংজ্ঞা সংশ্লিষ্ট সকল যুক্তিযুক্ত প্রস্তাবনা এ নীতিমালাতে অন্তর্ভুক্ত করতে বদ্ধ পরিপকর।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময় করার জন্য অনুষ্ঠানে বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি ও ব্যাংকার উপস্থিত ছিলেন।