চলমান তাপপ্রবাহে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য চাহিদা বেড়েছে ডাবের। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেছে দামও।
রাজধানীতে ৩০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। আর মাঝারি ও বড় আকারের ডাব প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। এটি এ বছরের রেকর্ডমূল্য।
মতিঝিল এলাকায় ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করেন জুসিনুর। তিনি ইউএনবিকে বলেন, ঈদের ছুটির পর পাইকাররা ডাবের দাম ৩০ থেকে ৬০ টাকা বাড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছরে ব্যবসায় এত বেশি দাম কখনো দেখেননি। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও নয়।
সদরঘাটের বাদামতলীতে ডাব ও ফলের পাইকারি বিক্রেতা ইব্রাহিম সরদার এ প্রতিবেদককে জানান, সবসময় ঈদের পরপর চাহিদা কম থাকত কিন্তু এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে।
উৎপাদকদের কাছ থেকে সরবরাহকারীরা বেশি দামে ডাব কিনেছেন আর সেই কারণে পাইকারি বাজারে ডাবের দাম বাড়ছে বলে জানান এই বিক্রেতা। সে কারণেই তাকেও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে বেশি দামেই ডাব কিনতে হয়েছে।
রবিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ, গুলিস্তান, পল্টন ও শাহবাগ এলাকায় ডাবের দাম বেশ বাড়তি দেখা গেছে।
ঢাকার অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারেও দেখা গেছে ডাবের দাম বেশি। ব্যবসায়ীদের দাবি, বরিশাল, ভোলা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, ফরিদপুর, যশোর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সরবরাহ পয়েন্টেও বেড়েছে ডাবের দাম।
গত ১০ দিনের ব্যবধানে সরবরাহ পর্যায়ে ডাবের দাম প্রতিটিতে ৩০ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি বিক্রেতা সূর্য আলী ইউএনবিকে জানান, ১০০টি ডাবের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। এত চড়া দাম আগে দেখা যায়নি।
গত রমজান মাসেও ডাবের দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকার কম ছিল বলে জানান তিনি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ঢাকায় একটি ডাবের দাম ছিল গড়ে ২২ টাকা। ২০২০ সালে প্রতিটির দাম উঠেছিল ৭৪ টাকা।
ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতিটি ডাবের গড় দাম ১০০ টাকার নিচে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে নারিকেলের উৎপাদন ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯১ টন থেকে কমে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৬০ টনে নেমে এসেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর থেকে নারকেলের উৎপাদন কমতে শুরু করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫১ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৩২ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫২০ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৪৫৮ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৬০ টন নারকেল উৎপাদন হয়েছে।
ভোলা জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার টন নারিকেল উৎপাদিত হয় এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় উৎপাদন হয় ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৫০ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন বছরব্যাপী ফল উৎপাদন ও পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারিকেলের চাষ বাড়ছে না।
দেশে চাহিদা বাড়ায় ডাব ও নারকেলের উভয়ের দামই বেড়েছে বলে জানান তিনি।