কম দামে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঈদের পরে দিন রাত অপেক্ষা করেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে চামড়ায় পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় তা ফেলেই চলে যান অনেকে। কিছু ব্যবসায়ী এলাকাবাসীর চাপে দুর্গন্ধ বের হওয়া চামড়াগুলো পিকআপ করে মুহুরী নদীতে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। আবার অনেকে ক্রেতা পেলেও ক্রয় মূল্যের থেকে কম দাম বলায় বিক্রি করতে পারেননি।
সোমবার (৯ জুন) দুপুর পর্যন্ত ফেনীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এদিকে ফেনীর পরশুরামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি না হওয়ায় সিলোনিয়া নদীতে ফেলে দিয়েছেন শুক্কুর আলী নামের এক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় তাকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার (৮ জুন) রাতে পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিপাথর থেকে ভ্রাম্যামাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের নির্দেশে তাকে আটক করা হয়।
আটক শুক্কুর আলী মালিপাথর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। এর আগে বিকালে চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানান, শুক্কুর নামের স্থানীয় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী কোরবানির ঈদের দিন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বেশ কিছু কোরবানির পশুর চামড়া কেনেন। এরপর চামড়া বিক্রির জন্য পিকআপভ্যানে পরশুরাম বাজারে নিয়ে যান। কিন্তু কেউ চামড়া কেনার আগ্রহ না দেখালে রাগে-ক্ষোভে চামড়াগুলো নদীতে ফেলে দেন।
পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম বলেন, পশুর চামড়া নদীতে ফেলে পরিবেশ দূষণের দায়ে অভিযুক্তকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে ফেনী সদরসহ ৫টি উপজেলার বিভিন্ন বাজারের রাস্তায় পচা চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে করে পচা চামড়ার দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রশাসন থেকে অবিক্রিত চামড়ার জন্য বিনা মূল্যে লবন বিতরণ করার ঘোষণা করে। অবিক্রিত চামড়ায় লবণ দিয়ে বিক্রির কথা বলা হয়ে থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা করেননি। ফলে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে পচন ধরে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, গত শনিবার রাত থেকে জেলার বিভিন্ন বাজারের কয়েক হাজার চামড়া ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য অপেক্ষা করে।
কিন্তু কোনো বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে সোমবার দুপুরে চামড়া ফেলে পালিয়ে যায় তারা। চামড়া পচনের ফলে রাস্তার আশেপাশে দুর্গন্ধ ও চামড়ার পানি বের হওয়ায় পথচারী ও যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা জানান, সরকার চামড়া বিক্রির দাম প্রকাশ করেছে। চামড়া ব্যবসায়ীদের কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে, কারণ আগামী কয়েক দিন ঢাকায় চামড়া প্রবেশ করতে পারবে না।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এক-দুইটা ব্যতিক্রম ছাড়া তালিকার সকল মাদরাসা, এতিমখানাকে চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ দেওয়া হয়েছে ১২৩ টন বিনামূল্যে। চামড়া সংরক্ষণ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে, কেউ কেউ লবণ নিলেও চামড়া সংরক্ষণ করে নাই বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, চামড়া ধরে না রাখলে ভালো দাম পাওয়া যাবে না। বাজারে সাপ্লাই অত্যধিক হলে মৌসুমী ব্যবসায়ী কিংবা 'সিন্ডিকেট' সুযোগ নিতে পারে। ঢাকায় ঈদের ১০ দিন কোনো চামড়া ঢুকতে পারবে না।