বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ টন পণ্য, রপ্তানি হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টন পণ্য।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ১৯ হয় লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৯ টন, রপ্তানি হয় ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩ টন পণ্য।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয় ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ টন, রপ্তানি হয় ৩ লাখ ১১ হাজার ১৭ টন পণ্য।
২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয় ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন পণ্য, ভারতে রপ্তানি হয় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ টন।
২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার ১১৩ টন এবং রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৫ টন পণ্য।
বেনাপোলে পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত বাড়ছে
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, কেমিক্যাল, মেশিনারি যন্ত্রাংশ, সুতা, ট্রাক চেসিস, মোটর সাইকেল, টায়ার টিউব, বিভিন্ন প্লান্টের মালামাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য, মাছ, মেলামাইন, তৈরি পোশাক, খাদ্য দ্রব্য, ঝুট ও টিস্যু উল্লেখ্যযোগ্য।
বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের স্থল ও রেলপথে ভারতের সাথে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকা পণ্য সেদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। আমদানি করা পণ্য থেকে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়ে থাকে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি আছে ১ হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বেনাপোল সীমান্তে গত বছর ১২০ কোটি টাকার মাদক, অস্ত্র ও সোনা জব্দ
বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে প্রথম থেকে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের আরও বেশি পণ্য আমদানির ইচ্ছা থাকলেও, বন্দরের অবকাঠামোগত নানা সমস্যায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না। লোকসানের মুখে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। ফলে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে আমদানির ওপর। তবে বাড়ছে রপ্তানি। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে আমদানির পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্যও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ভারত থেকে দেশের স্থলপথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
বেনাপোল বন্দর আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বন্দরে আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবাসায়ীদের দাবি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। বন্দরের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচেই কোটি কোটি টাকার পণ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এর ফলে রোদ-বৃষ্টিতে পণ্যের গুণগতমান যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি চুরি হচ্ছে প্রকাশ্যে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১২০ মেট্রিক টন বিস্ফোরক আমদানি
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে না। আজও বাস্তবায়ন হয়নি ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও।
প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব কবলে তিনি জানান।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
আমদানি করা পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরের চারপাশ দিয়ে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে রাজস্ব আয়ও বেড়ে যাবে।’