বেসরকারি ব্যয় বৃদ্ধি ও বড় বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
এই পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনের অংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে (২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন) প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি এবং বেসরকারি ব্যয়ের ওপর উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়ায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া উচ্চ ঋণের খরচ চাহিদা কমিয়েছে।
পাকিস্তানে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ যদিও এখনও অবনমিত, আমদানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পর ২০২৩ সালের শেষের দিকে এবং চলতি বছরের প্রথম দিকে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিসহ উন্নতি করেছে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা মূলত ভারতের দ্রুত প্রবৃদ্ধির কারণে হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে মিশ্র বেসরকারি খাতের কার্যক্রম দেখা গেছে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় সংক্রমণ বাড়লেও চলমান আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বাংলাদেশ শিল্পবিষয়ক কার্যক্রমে বাধার সম্মুখীন হয়েছে।
বর্ষার কারণে কৃষি উৎপাদনে ব্যাঘাত সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ) শিল্প ও পরিষেবা কার্যকলাপের কারণে ভারতের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা পর্যটন ও রেমিট্যান্স পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সফলতা অর্জন করেছে, যদিও উভয়ই প্রাক-মহামারি স্তরের নিচে রয়েছে। আংশিকভাবে পর্যটন এবং রেমিট্যান্স পুনরুদ্ধারের কারণে ভুটান এবং নেপালও প্রবৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে করনীতির ধারাবাহিকতা চান মার্কিন ব্যবসায়ীরা: সালমান এফ রহমান
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হবে এবং ২০২৫-২৬ সাল পর্যন্ত এই হারে থাকবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ২০২৪ সালে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ সালে সামান্য বেড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হওয়ার আগে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশে স্থির থাকবে। যা কোভিড-১৯ সময়ের আগের গড় ৩ দশমিক ১ শতাংশের চেয়ে কম।
উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো ২০২৪-২৫ সালে গড়ে ৪ শতাংশ হারে বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় কিছুটা ধীর। নিম্ন আয়ের অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি প্রথম তিন মাসে এসব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমেছে।
বিপরীতে, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো ২০২৪ সালে ১ দশমিক ৫ শতাংশে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় রাখবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৫ সালে ১ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হবে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্ডারমিট গিল বলেন, 'মহামারি, সংঘাত, মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রানীতির কড়াকড়ির কারণে সৃষ্ট উত্থানের চার বছর পর মনে হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রয়েছে।’ ‘তবে ২০২০ সালের আগের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কম পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বের দরিদ্রতম অর্থনীতির পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। তারা শাস্তিমূলক মাত্রার ঋণ পরিশোধ, বাণিজ্য সম্ভাবনা সংকুচিত এবং ব্যয়বহুল জলবায়ু ইভেন্টগুলোর মুখোমুখি হয়। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোকে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, সরকারি ঋণ হ্রাস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
চারটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির মধ্যে ২০১৯ সালের তুলনায় একটি দেশ দরিদ্র থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উন্নয়নশীল ও উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে আয়ের ব্যবধান ২০২০-২৪ সালে প্রায় অর্ধেক উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বাড়বে, যা ১৯৯০-এর দশকের পর সর্বোচ্চ। ২০২৬ সালের মধ্যে এসব অর্থনীতিতে মাথাপিছু আয় গড়ে ৩ দশমিক শূন্য শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা কোভিড-১৯ এর আগের গড় ৩ দশমিক ৮ শতাংশের নিচে।
আরও পড়ুন: হোন্ডার বৈদ্যুতিক গাড়িতে বিনিয়োগ ঘোষণা, লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাজার
বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালে সাড়ে ৩ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই পতন আগের প্রত্যাশার চেয়ে ধীর। অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ সালের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪ শতাংশ সুদের হার বেশি রাখতে পারে, যা ২০০০-১৯ সালের গড়ের দ্বিগুণ।
গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্টে বেসরকারি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ১ শতাংশ বাড়ালে মাঝারি মেয়াদে উৎপাদন ১ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
প্রতিবেদনটি রাজস্ব স্থিতিশীলতা, ব্যয় দক্ষতা ও রাজস্ব কাঠামো উন্নত করার জন্য ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হওয়া ছোট দেশগুলোর কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিপিসিসিআই সভাপতি হুমায়ুন রশীদের বৈঠক