দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যদের তুলনায় ভারতের অবস্থা অনেক ভালোI তারা নিজেরাও এটা ভাবে ও বলেI এতো বড় দেশে, এতো সম্পদ, ভূমি, মানুষ ... ইন্ডিয়া নিজেকে একটা উঠতি পরাশক্তি ভাবে। কিন্তু ইদানীংকালের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যা চিন্তিত হওয়ার মতো। ভারতের রাজনৈতিক নেতারা কি পাবলিকের বাস্তবতা ও মন ধরতে পারছেন না?
তিনটি উদাহরণ
ভারতের কৃষি নীতি দারুণ সমালোচিত হয় বিশেষ করে তাদের খাদ্য উৎপাদনকারী পাঞ্জাবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়ে ওঠে সেখানে প্রধান রাজনৈতিক বিষয়I শেষ পর্যন্ত মোদিকে পিছিয়ে আসতে হয়, নীতি পাল্টাতে হয়I এবং রাজনৈতিক দামও দিতে হয়েছে। এর জন্য যে ঝামেলা বিরোধী দলগুলা ফেলে তাতে মনে হয়েছে, এই কৃষি নীতি খুব একটা পরিপক্ক ভাবনার ফসল ছিল না।
দ্বিতীয়টা হচ্ছে, হযরত মোহম্মদকে নিয়ে শর্মা-জিন্দালের বক্তব্য। এটাতেও বিপাকে পড়ে ভারত, দেশের ভেতর ও বাইরেI যদিও বিজেপি জানে জনগণ এই বক্তব্যের পক্ষে এবং এতে তাদের রাজনৈতিক লাভ হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল কিছুটা আলাদাI এর বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদ হয়েছে এবং অনেক স্থানে তা ছড়িয়েছে। এতে অবশ্য বিজেপি'র লাভ। কারণ মুসলমান বিরোধী মনোভাব এই দলের অন্যতম সমর্থনের শক্তি। তারা এই দলকে ভোট দেয় না। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কোনো দ্বন্দ্ব-সহিংসতা অর্থনীতির ওপর চাপ ফেলতে বাধ্য, যেটা তাদের হিসেবে ছিল না।
সেটা ছাড়া রয়েছে আন্তর্জাতিক ‘ইসলামী উম্মা’ বিশেষ করে আরব দেশসমূহ যার সঙ্গে ভারত সম্পর্ক রাখতে চায়। যেখানে ভারতীয় মালামাল ও ভারতীয়দের চাকরির বড় বাজার, সেখানে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে যা ভারতকে বিব্রত করেছেI এবং সেই কারণে এই দুই নেতাকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়I কিন্তু তাদের সমর্থন ও প্রভাব বেড়েছে।
তবে ধর্ম কেন্দ্রিক রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করা যায় রাজনৈতিকভাবে। কিন্তু তার অসুবিধাও আছেI মুসলমানদের প্রান্তিক করলেই শুধু চলবে না, সে তুলনায় অন্যদের লাভ হতে হবেI সকল রাজনীতির প্রধান সূত্র অর্থনীতি এবং সেখানেই ভারত খেলেও তৃতীয় ধাক্কা।
অগ্নি-পরীক্ষা
এই তৃতীয় ধাক্কাটি সবচেয়ে বড় যদিও দেশের বাইরে এটা নিয়ে কম আলোচনা হচ্ছে। এটি ভারতের অগ্নিবীর প্রকল্প যার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের পর সামরিক বাহিনীতে সাময়িকভাবে কন্ট্রাক্ট কর্মী নিয়োগ হওয়ার কথা। মেয়াদ শেষ হলে তাদের এক অংশ আর্মির পূর্ণ সদস্য হবেI এটি নিয়ে মোদির অনেক আশা গর্ব ছিল। কারণ সেনাবাহিনীর বৃদ্ধিকরণ দরকার এবং এরা কিছুদিনের জন্য কম খরচে অনেকে কাজে লাগবে তারI এছাড়া একটি প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হবে যারা সাচ্চা ভারতীয় দেশ প্রেমিক।
বিরাট উৎসাহের সঙ্গে এর ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তীব্র সহিংস প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সেই সব এলাকা যেটা বিজেপি'র একাট্টা সমর্থক এলাকা হিসেবে পরিচিতI উত্তর প্রদেশ, বিহার, হরিয়ানা ও অন্য কয়েকটি জায়গার ওপর ভিত্তি করে বিজেপি দাঁড়িয়ে। এটি তারা আশা করেনি। কারণ উদ্দেশ্য ছিল এদের সহায়তা করা, সমর্থন আরও সবল করাI ফলে ধাক্কা লেগেছে।
প্রতিবাদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে প্রকল্পে যাতে পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়।
এছাড়া, দলের প্রধান নেতারা মাঠে নেমেছেন তরুণদের বোঝাতে। কারণ সরকার নিশ্চিত যারা হাঙ্গামা করছে তারা তাদের ভোটার।
পাবলিকের চাহিদা
যেটা মনে হচ্ছে সেটা হলো বিজেপি ভাবছে দেশের মানুষ রাজনীতিকে প্রধান স্থান দেয়, অর্থনীতিকে নয়। এই ধারণা খুবই সনাতনী, কলোনিয়াল যুগের চেয়ে পুরাতন। এটা দিয়ে বর্তমানে চলবে না যদিও এতদিন নির্বাচনে তাদের লাভ হয়েছেI নেতারা কি জনমতের আসল চাহিদা ধরতে পারছেন না? তারা কি ভাবছেন, ভারতের মানুষ স্লোগান শুনে ভোট দেবে আজীবন। কিন্তু মানুষ তো চায় রুজি, চায় বেতন ইত্যাদি। এটা ঠিক ভারতের মুসলমানদের প্রান্তিক করলে অন্যরা বেশি সুবিধা পাবে। কিন্তু যদি লাভ না হয় তাহলে প্রান্তিক করে কি লাভ? কৃষি নীতি, ধর্ম নীতি ও সামরিক নীতি তিনটায় প্রমাণ করলো বিজেপি পাবলিককে নিজেদের মতো ইডিওলজিকাল ভাবলেও পাবলিকের প্রধান ইডিওলজি পেট। ওটা ঠান্ডা করতে হবে।
রাজনীতির প্রধান কথাই অর্থনীতি
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের স্থান কি হবে?