পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা জাগ্রত করতে পারলে জাতির মধ্যে স্থায়ী শান্তি আসতে পারে।
তিনি বলেন, আসুন আমরা এমন একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য একসঙ্গে কাজ করি।
পররাষ্টমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে এখানে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সব দেশ ও জাতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ঢাকার সবুজবাগে অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম ও বৌদ্ধ সার্কিট উন্নয়ন” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন।
মোমেন বলেন, বৌদ্ধ সংগঠন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা শান্তিপূর্ণ সমাজ ও অঞ্চলের জন্য অমূল্য ভিত্তি হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বিশ্বাস করতেন যে উন্নয়নের জন্য শান্তি অপরিহার্য।
বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির শক্তিশালী প্রবক্তা হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ইসিতে অডিট রিপোর্ট: গত বছর আ. লীগের উদ্বৃত্ত ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সবার শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া তিনি শান্তির সংস্কৃতি শিরোনামে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব প্রচার করেছিলেন।
তিনি বলেন, সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধ অন্যদের প্রতি অসহিষ্ণুতা ও অসম্মানের মানসিকতা থেকে সৃষ্টি হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষ একে অপরকে ভালোবাসে, সহানুভূতিশীল, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমর্থন করে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতি তাদের গভীর অনুরাগ স্পষ্ট। কারণ তারা সম্মিলিতভাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন।
মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার করছেন। আমরা বৈষম্য করি না।’
মোমেন আরও বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করা হয়।
তিনি বলেন, বৌদ্ধধর্ম হলো বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম। যার অনুসারী ৫২০ মিলিয়নেরও বেশি। বা বিশ্ব জনসংখ্যার ৭ শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশে প্রায় ১০ মিলিয়ন বৌদ্ধ বসবাস করেন।
তিনি বলেন, মূল শিক্ষার উপর ভিত্তি করে বৌদ্ধধর্ম বিভিন্ন ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনগুলিকে ধারণ করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বৌদ্ধ। বৌদ্ধ জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বেশি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত।
মোমেন বলেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের ঐতিহাসিক ভিত্তি ও উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক পরিক্রমা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া বৌদ্ধ ধর্মের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যা দুই দেশের মধ্যে জনগণের যোগাযোগ ও বন্ধনকে আরও গভীর করতে পারে।
মোমেন এই ক্ষেত্রে আরও সম্পৃক্ততার জন্য পাঁচটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, বৌদ্ধধর্ম ও এর ঐতিহ্যকে দেশগুলোর মধ্যে 'বন্ধুত্বের' মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার কো প্রয়োজন।
এ জন্য তিনি বলেন, এসব ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এটি শুধু আধ্যাত্মিক অনুসারীদের জন্যই নয়। যারা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অনুসন্ধান করতে আগ্রহী তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
মোমেন বলেন, যদিও আমরা দ্বিপাক্ষিকভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারি তাহলে আমাদেরও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি আঞ্চলিক-স্তরের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য এই অঞ্চলের বৌদ্ধ ঐতিহ্যের সম্ভাবনাকে উন্মোচন করতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটিকে সম্প্রসার করতে হবে।
তিনি বলেন, সার্ক ও বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। যাতে এই অঞ্চলে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রচারের উপায় বের করা যায়। বিশেষ করে বৌদ্ধ ধর্মের দর্শন প্রচার করা।
আরও পড়ুন: বিএনপির ‘সহিংসতার’ বিরুদ্ধে ১৪ দলের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি
মোমেন বলেন, এ অঞ্চলের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নের পরিপূরক হিসেবে টেকসই পর্যটন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে হবে।
তিনি বৌদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচার সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা, সর্বোত্তম অনুশীলন এবং চ্যালেঞ্জগুলো ভাগ করে নেওয়ার জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং পর্যটন উন্নয়নের উপর নিয়মিত আঞ্চলিক ফোরাম এবং সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব করেন।
থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো প্রমুখ।