বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিপর্যস্ত।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠিত অনেক স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক ব্যাংকিংয়ের দিকে মনোযোগ না দিয়ে জনগণের অর্থ লুণ্ঠনে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়লে সরকারকে ভয়াবহ পরিণামের হুঁশিয়ারি ফখরুলের
তিনি বলেন, 'এটি পুরোপুরি একটি ফাঁকা অর্থনীতি। অর্থনীতি বিপর্যস্ত। আসলে তারা (ক্ষমতাসীন দল) দেশের সম্পদ লুট করেছে এবং তাদের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।‘
সংবাদপত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকিং ও অন্যান্য খাত থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা লুট পাট হয়েছে।
তিনি বলেন, 'এই লোকদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) দেশে নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই। সুতরাং, এখানে কোনো নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। এর ফলে দরিদ্ররা দরিদ্র থেকে যাচ্ছে এবং আয় বৈষম্য ও অসমতা দিন দিন বাড়ছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অধ্যাপক রেহমান সোবহানের অর্থনীতি নিয়ে সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে দুটি সমাজ তৈরি হয়েছে- একটি হচ্ছে অত্যন্ত ধনী শ্রেণির মানুষ যারা বিদেশে যায়, দামি পোশাক পরে এবং বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজের মতো বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করে। ‘এটাই বাস্তবতা।’
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে অর্থনীতি পড়ানো এই বিএনপি নেতা বলেন, দেশে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি হলো জবাবদিহি।
আরও পড়ুন:সরকার দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে: ফখরুল
যেহেতু বর্তমান ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি নেই, তাই দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও বিচার বিভাগ তাদের হাতে নিরাপদ নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সত্যিকারের জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক সরকারই পারে ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতকে উদ্ধার করে টেকসই উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে।
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, 'বর্তমান অবৈধ সরকার' শুধু রাজনীতিই নয়, অর্থনীতিকেও পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, 'তারা (সরকার) মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে প্রতারিত করছে। তারা শুধু জনগণকেই নয়, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও প্রতারিত করছে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা খুবই কঠিন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো: ফখরুল
তিনি বলেন, সরকারের ভুল নীতি, রাজনৈতিক দুর্বলতা ও ব্যাপক লুটপাটের কারণে আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে জনতা ব্যাংকের ২২ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে একটি বিশেষ কোয়ার্টার বা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের দেওয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকে। কারণ একটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপ একটি বেনামী ভুয়া কোম্পানির নামে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তবে গ্রুপটি সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে এই গোষ্ঠীটি কমপক্ষে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা লুট করা এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে সহজ কাজ। কারণ কিছু লোক ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহার করে ঋণ নেয় এবং রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে বছরের পর বছর ধরে ঋণ পরিশোধ না করে বিদেশে অর্থ পাচার করে।
অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয় এমন দেশে সাধারণত বিদেশি ব্যাংক আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ১৩টি স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলেও বিদেশি ব্যাংকগুলো এখানে কাজ করতে আগ্রহ দেখায়নি।
ফখরুল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে এবং ডলারের অভাবে প্রয়োজনীয় পণ্য, কাঁচামাল, মেশিন ও সরঞ্জাম আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, যা অর্থনীতির গতিকে ধীর করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার ও তাদের অবৈধ সুবিধাভোগীরা দেশকে দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও বিদেশে অর্থ পাচারের স্বর্গে পরিণত করায় ডলার সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে।