দ্বিতীয় ধাপে নওগাঁর পোরশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ঘোড়া মার্কার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে অংশগ্রহণ করায় বিএনপির দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) প্রদান করা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে ঘোড়া মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন মোল্লা।
নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন, মুরশিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি শওকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম।
এছাড়া একই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করায় মমতাজ বেগমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মমতাজ বেগম পোরশা উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি নওগাঁ জেলা মহিলা দলের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।
রবিবার (৫ মে) সকালে দলীয় প্যাডে নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের শোকজ করা হয়।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি
এর আগে শনিবার (৪ মে) বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে মমতাজ বেগমকে বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন পোরশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে মমতাজ বেগমকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হলো।
বায়েজিদ হোসেন পলাশের স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ এপ্রিল শিশা বাজারে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নুরুল ইসলাম একজন প্রার্থীর নির্বাচনি সভায় যোগদান করে বক্তব্য প্রদান করেছেন যা সংগঠনের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী ও দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতার সমিল। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনি প্রচারে অংশগ্রহণ করার জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা পত্রে উল্লেখিত তারিখের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব বরাবর লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো ৷
নোটিশ দেওয়ার কারণ হিসেবে পলাশ বলেন, ‘ঘোড়া মার্কার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারে আমাদের দলের একজন বক্তব্য রেখেছিলেন, আরেকজন উপস্থিত ছিলেন। তাই তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
এছাড়া কেন্দ্র থেকে মমতাজ বেগমকে বহিষ্কারের বিষয়টিও তিনি নিশ্চিত করেন।
জানতে চাইলে মুরশিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ওটা আমার নিজস্ব ইউনিয়ন। আমি একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চলে আসে সেখানে। আমার সাথে করমর্দন করে আমাকে স্কুলের একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে কিছু বলার জন্য বলা হয়।
‘তারপরও আমি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক নান্নু ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে উপজেলা সভাপতির সাথে কথা বলতে বলেন।’
আরও পড়ুন: দুধ দিয়ে গোসল করে দলত্যাগ বিএনপি নেতার
একটু ক্ষোভ নিয়েই এ বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এখানে আমাদের অনেক লোকজন সরাসরি কাজ না করলেও তারা নির্বাচনের কথা বলছে। আর আমি দল পাগল মানুষ। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, প্রথম সারিতে থেকে আমি ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করব। তবে কারণ দর্শানোর নোটিশ হাতে পেলে অবশ্যই লিখিতভাবে জবাব দেব।’
ঘোড়া মার্কার প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে মুরশিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি শওকত আলী জানান, আকস্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হতে হয়েছিল। তবে নোটিশ হাতে পেলে লিখিত জবাব দিবেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২ মে) নওগাঁ জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের দলীয় প্যাডে স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে দুই ছাত্রদল নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। জেলার পত্নীতলা উপজেলা পরিষদ প্রথম ধাপের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ঘোড়া মার্কার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক চৌধুরীর নির্বাচনি প্রচারে অংশগ্রহণ করায় ছাত্রদলের দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
শোকজ পাওয়া দুই ছাত্রদল নেতা হলেন, নজিপুর পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ হোসেন সৌরভ ও নজিপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হোরাইরা বিল্লা।