বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার যতই কৌশল অবলম্বন করুক না কেন এবার সরকারে অবশ্যই পরিবর্তন হবে।
তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন আসবেই, সত্য ও সুন্দরের জয় হবে এবং গণতন্ত্রের জয় হবে ইনশাআল্লাহ।
ফখরুল বলেন, তাদের দল জনগণের শক্তি এবং গণতন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, যা এখন সমগ্র বিশ্বের দ্বারা প্রশংসিত।
আরও পড়ুন: ভয়-প্রতিহিংসা থেকে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে আ. লীগ: ফখরুল
তিনি বলেন, এ কারণেই আমরা এখন এতটা আশাবাদী। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন কেন আমি সবসময় এমন হাসি মুখে থাকি। আমি হাসি কারণ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে এই ভয়ংকর দানব (সরকার) জনগণের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে দিয়ে আমাদের বুক থেকে সরে যাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করতে সারা বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। তারা (জনগণ) সত্যিই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে চায়।
ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০ শতাংশ আসনও পাবে না।
বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দলের একটাই দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিদেশিদের ভয় দেখানোর জন্য সরকার
ফখরুল অভিযোগ করেন, চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে এবং বিদেশিদের জুজুর ভয় দেখানোর জন্য মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান চালিয়ে সরকার নাটক করেছেন।
তিনি বলেন, তারা (সরকার) কতটা ভয়ংকর তার প্রমাণ হলো তারা কুলাউড়ার একটি প্রত্যন্ত বাড়ি থেকে আকস্মিক জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে ৪ জন পুরুষ, ৫ জন মহিলা এবং ১ জন শিশুকে আটক করেছে। এ ছাড়া তারা ৩ কেজি বিস্ফোরক ও ডেটোনেটরও জব্দ করেছে।
তবে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা হঠাৎ কোথা থেকে ওই বাড়িতে গেল এবং কারা তাদের নিয়ে এল এবং কীভাবে তারা সেখানে বিস্ফোরক ও ডেটোনেটর নিয়ে এসেছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, সরকার সবসময় জঙ্গিদের নিয়ে নাটক করে।
তিনি বলেন, এটা একটা অশুভ লক্ষণ। এখন দেখবেন তারা জঙ্গিদের কথা বলে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
তিনি আরও বলেন, তারা আবার ক্ষমতায় না এলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না- এই কথা বলে পশ্চিমা বিশ্বকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তারা।
খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ
ফখরুল বলেন, বর্তমানে খুবই অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। অন্য কোনো সভ্য দেশে হলে সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিত।
তিনি বলেন, চিকিৎসকরা বারবার বলছেন- তার যে চিকিৎসা দরকার তা দেশে সম্ভব নয় এবং তার চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যেতে হবে।
বিএনপির এই নেতা আক্ষেপ করে বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে সব সময় চায় খালেদা জিয়া চিরতরে পৃথিবী থেকে চলে যান।
রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অল্প বয়সে আরাফাত রহমান ইহলোক ত্যাগ করেছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার উদাসীন
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার উদাসীন।
তিনি আরও বলেন, শিশুসহ হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক মানুষ।
এ ছাড়া সরকার যখন কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্পের এত কথা বলেন তারা কেন এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন?
বিএনপি নেতা বলেন, দেশের জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এ কারণে তারা বিরোধী দলকে দমন ও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারছেন না। এমনকি রাজনীতিতে যাদের সম্পৃক্ততা নেই তারাও রেহাই পাচ্ছেন না। বিএনপির কর্মীদের খুঁজে না পেলে তাদের বাবা-ভাইদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন ফখরুল।
আরও পড়ুন: মানুষ বিএনপিকে 'হিন্দুবিরোধী' বলে বিশ্বাস করে না: ফখরুল