বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাই যথেষ্ট নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের অবৈধ অস্ত্রধারী নেতাকর্মীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবিকারী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, নতুন রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।
সেলিমা রহমান বলেন, ‘শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাই কি যথেষ্ট? তাদের কাছে বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র, বন্দুক, পিস্তল এবং অন্যান্য অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, যেগুলো মানুষের ওপর আক্রমণ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই তাদের কঠোর হাতে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে শেখ হাসিনাকে আইনের আওতায় আনা এবং বিভিন্ন অপকর্ম ও দমনমূলক কাজের জন্য তার বিচার করা।
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে রেখে স্লো পয়জনিংকরে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন, কিন্তু গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছেন। আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছি, তবে তার শারীরিক অবস্থা এখনো বিদেশ সফরের জন্য উপযুক্ত নয়।’
নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সেলিমা রহমান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সেলিমা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের নেতাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের মনে রাখতে হবে, কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করা যাবে না। যদি আপনাদের লক্ষ্য হয় সবার অধিকার ফিরিয়ে আনা, তাহলে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্ম করে এগিয়ে যেতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, সত্যিকারের সুশাসন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায় পরাজিত শক্তি সংকটের সুযোগ নেবে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনি রোডম্যাপ না থাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সন্দেহ করছে জনগণ: বিএনপি
তিনি বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে, কিন্তু এখন তারা স্বস্তিতে নেই।
তিনি বলেন, 'আমরা প্রকৃতপক্ষে একটি সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। মুক্তি পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন অফিস অবরোধ কর্মসূচি দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে পতিত স্বৈরশাসকের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, যাতে সরকার সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে না পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারে।’
ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকার চলমান সংকট সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে সেলিমা বলেন, বর্তমান সরকার তা থেকে উত্তরণে কাজ করছে। ‘কিন্তু পতিত শাসকগোষ্ঠীর সহযোগীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়ে গেছে এবং তারা একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, পরাজিত শক্তি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শিল্প-কারখানায় বিশৃঙ্খলাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাদের মার্কেট সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের স্বপ্ন ছিল মানুষের সকল গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনা, কারণ তারা তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে যারা আছেন তারা ভালো ও ভদ্র। তারা দেশের জন্য কাজ করছে, আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। তবে, তাদের বুঝতে হবে যে সবচেয়ে জরুরি বিষয়গুলো প্রথমে সমাধান করা উচিত। সব সংস্কার একবারে সম্ভব নয়। একটি রাজনৈতিক দল জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে তারা কার্যকরভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবে।’