নতুন বাংলাদেশ গড়তে দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি ঐক্যের ডাক দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মূখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, আগামীর নতুন বাংলাদেশে আমরা তরুণ প্রজন্ম যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে কোনো অপশক্তি আমাদের আটকে রাখতে পারবে না।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ভোলা সরকারি স্কুল-সংলগ্ন ইলিশা ফোয়ারা মোড়ে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস বলেন, ‘আজকে যখন আমরা চিন্তা করছি—অভ্যুত্থানে যে গতিকে সামনে রেখে আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি, যে স্বপ্নগুলো আমরা এখনও ধারণ করি, বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখি, সে স্বপ্নগুলো একটি ঘোষণাপত্রে লিখিত আকারে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কোন কথাগুলো তাতে থাকা প্রয়োজন, তা যেন কয়েকজনের কথায় না হয়; সেগুলো যেন বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার ও থানার প্রতিটি শ্রেণির মানুষের কথা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে, হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ্যভাবে এ দেশের ফ্যাসিস্টবিরোধী সব দলের, মতের, ধর্মের, বয়সের ও শ্রেণির মানুষ একসাথে লড়াই করেছি। তাই এটা আমাদের দ্বায়বদ্ধতা। এ দেশের প্রত্যেকটি প্রান্তে গিয়ে সেই জেলার সাধারণ মানুষের কথা শোনা এবং সে অনুযায়ী আগামীর বাংলাদেশের কাজগুলো করা আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।’
এই সমন্বয়ক বলেন, ‘বাংলাদেশের যে জায়গাগুলোতে এখনো দালালি ও চাঁদাবাজি হয়, হোক সেটা কেউ পোশাক পরে করুক, কেউ সাধারণ পোশাকে করুক, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।’
‘আমার এই ভোলার সহযোদ্ধা ভাইরা আমাদের বলেছেন, যারা আমার জসিম ভাইসহ অসংখ্য ভাইকে রক্তাক্ত করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ওই সময়ের যে এসপি, তার সঙ্গে থাকা অফিসার, কনস্টেবলরা আমার ভাইদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, তাদের শাস্তি যেন শুধু বদলি না হয়। এই অভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, তাদের যেন স্বীকৃতি দেওয়া হয়।’
এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যে ভোলায় গ্যাস উৎপাদন হয়, সেখানকার মানুষ কেন গ্যাস পাবে না? যে ভোলা থেকে একজন রোগী লঞ্চ স্পিডবোটে ফেরিতে যেতে গিয়ে মরতে হয়, সেখানে কেন মেডিকেল কলেজ হবে না?’
‘৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে যদি পদ্মা সেতু হয়, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা সেতুর পাশে একইসঙ্গে রেল যোগাযোগ হয়, তাহলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে কেন বরিশাল থেকে ভোলা একটি সংযোগ সেতু হবে না?’
ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ জেলার গ্যাস সিন্ডিকেট করে শুধুমাত্র ব্যবসা করার জন্য রক্তচোষার মতো কেউ যাতে নিয়ে যেতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।
পথসভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখপাত্র শারমিন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল ফয়সাল, ভোলা জেলা সমন্বয়কদের মধ্যে মো. ইসরাফিল হোসেন জাবির, ইসরাত জাহান আলভিসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
এর আগে, সকালে সারজিস আলম ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ জসিম উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে তাদের সহানুভূতি জানান। এরপর তারা জসিম উদ্দিনের কবর জিয়ারত করেন। পরে ভোলা বাংলা স্কুল মোড় সদর রোড ও নতুন বাজার এলাকায় ঘোষণাপত্রে ৭ দফা অন্তর্ভুক্তির দাবিতে লিফলেট বিতরণ করেন।