দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
এছাড়া বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টিতে পাকিস্তানের আইএসআই ইন্ধন যোগাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে ভারত সরকারকে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জয় বলেন, ৭৬ বছর বয়সি শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরবেন। তবে তিনি রাজনীতিতে ফিরবেন কি না, এ বিষয়ে স্পষ্ট করেননি।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণকে পরিত্যাগ করবে না এবং বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগকেও অন্ধকারে ছেড়ে দেবে না।
তিনি তার মাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দেশটির সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে সহায়তা ও চাপ প্রয়োগের জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানান।
জয় বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আমি বলেছিলাম তিনি বাংলাদেশে আর ফিরবেন না। কিন্তু সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর লাগাতার হামলার পর গত দুদিনে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এখন আমরা আমাদের জনগণকে নিরাপদে রাখতে যা যা করা দরকার তা করতে যাচ্ছি; আমরা তাদের একা ছেড়ে যাব না।
টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকালে তিনি পিটিআইকে বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে তিনি অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরবেন।’
আরও পড়ুন: রাজনীতিতে ফিরবেন না শেখ হাসিনা: ছেলে সজীব ওয়াজেদ
বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেতে যাচ্ছে উল্লেখ করে জয় দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। বলেন, ‘অন্যথায় দেশে নৈরাজ্য বিরাজ করবে এবং এই অঞ্চলের দ্বিতীয় আফগানিস্তানে পরিণত হবে।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কখনো প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র চলতে পারে না। তার (মুহাম্মদ ইউনূস) ব্যক্তিগত মতাদর্শ যাই হোক না কেন, তিনি বলেছেন, তিনি ঐক্যের সরকার চান, এগিয়ে যেতে চান এবং অতীতের ভুলগুলোর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে দেবেন না। আশা করি তিনি তার কথায় অবিচল থাকবেন।’
জয় বলেন, গণতন্ত্র ফিরে এলে হয় আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এবং মুজিব পরিবার ও শেখ হাসিনা পাশে থাকবে।
গত দুদিন ধরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সব নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মা শীগগিরই যেকোনো সময় অবসর নিতে চেয়েছিলেন। তাই আমরা ভেবেছিলাম, তিনি যেহেতু চলে গেছেন, তারা (হামলাকারীরা) আমাদের দলের লোকদের কিছু করবে না; কিন্তু তা হয়নি। উল্টো তারা হামলা শুরু করে।’
জয় কিংবা তার বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি না- এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশকে নৈরাজ্য থেকে রক্ষা করার জন্য যা যা করা দরকার, তিনি করবেন।
‘এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর আমি দিতে পারব না। তবে বাংলাদেশকে বাঁচাতে এবং আওয়ামী লীগকে রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার, আমি তাই করব। মুজিব পরিবার তাদের ছেড়ে যাবে না।’
বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে জয় বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায়, বিদেশি হস্তক্ষেপ এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে।
‘পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমি পাকিস্তানের আইএসআইয়ের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করছি। হামলা ও বিক্ষোভ ছিল অত্যন্ত সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলার চেষ্টা ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যাই করুক না কেন, তারা পরিস্থিতি আরও খারাপ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করছে, যা কেবল সন্ত্রাসী সংগঠন এবং বিদেশি শক্তিই সরবরাহ করতে পারে।
সিআইএর মতো একটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এর সঙ্গে জড়িত থাকার গুঞ্জনের বিষয়ে জয় বলেন, (এ বিষয়ে) তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই, তবে সংশ্লিষ্টতা থাকতেও পারে। অবশ্য চীনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি একেবারে নাকচ করে দেন তিনি।
আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই এখন অগ্রাধিকার: ড. ইউনূস
শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য বা অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার খবরকে ‘গুজব’ বলে প্রত্যাখ্যান করে জয় বলেন, তার মায়ের মার্কিন ভিসা বাতিলের খবরটিও সত্য নয়।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা (রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা) করা হয়নি। আজ হোক কাল হোক, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আশা করছি, সেটা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মাধ্যমে হবে। আর সেটি হলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন।’
‘এই মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান। এখন প্রশ্ন হলো- তিনি কখন ফিরবেন!’
শৈশবের বেশিরভাগ সময় ভারতে পড়াশোনা করে কাটানো জয় এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতার জন্য দ্রুত বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘মাকে রক্ষা করার জন্য আমি ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারত যদি তার পূর্বাঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের চাপ দিতে হবে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দ্রুত পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব নিতে হবে।’
বাংলাদেশে ‘ভারতবিরোধী’ প্রচার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভারতবিরোধী শক্তি ইতোমধ্যে খুব সক্রিয় এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকায় আইএসআই এখন ভারতবিরোধী শক্তিকে যত খুশি অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে।’
ভারতবিরোধী শক্তিগুলো আরও জোরদার হওয়ার আগেই ভারতকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন জয়।
‘শেখ হাসিনা নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেছেন’ এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘আর যেন কোনো রক্তপাত না হয়, সেজন্য পরিবার থেকে তাকে চলে যাওয়ার জন্য জোর করা হয়েছিল।’
‘তিনি দেশ ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তাকে সুরক্ষা দিতে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এর ফলে গণভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসা শত শত বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হতে পারত। দেশের স্বার্থে আমরা তাকে বুঝিয়েছি যে, আমরা তাকে মরতে দিতে পারি না।’
জয় আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার দুর্বল ছিল না, কিন্তু আমার মা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করতে চাননি। তবে তিনি দেশ ছাড়ার পরও রক্তপাত থামেনি। শেখ হাসিনার থাকা ও না থাকার মধ্যে পার্থক্য কী, মানুষ তা এখন বুঝতে পারবে।’