প্রতিবেশী ভারত অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ফারাক্কা লংমার্চ দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে শুধু বিদেশি প্রভুর স্বার্থ হাসিলের জন্য।
ফখরুল বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের প্রতিবেশী (ভারত) জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব সময় তাদের সব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ফারাক্কা বাঁধ নয়, গঙ্গার পানি নয়, ১৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে বরাবরই গাফিলতি করছে। তারা সমস্যার সমাধান করছে না।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে এবং কালক্ষেপণ করছে।
তিনি বলেন, ‘এই ব্যর্থতার মূল কারণ এটি সম্পূর্ণরূপে একটি আজ্ঞাবহ সরকার। অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় ভারতের সঙ্গে দর-কষাকষিতে জনগণের স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নিতে তারা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আমদানি পণ্য এড়িয়ে চলার আহ্বান বিএনপির
৪৮ বছর আগে জনপ্রিয় নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে লংমার্চের স্মরণে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গঙ্গার পানি নিজ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে প্রবাহিত করতে ভারত সরকারের নির্মিত ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবিতে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহী থেকে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে এক বিশাল লংমার্চের নেতৃত্ব দেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের একমাত্র কাজ একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা। আর দেশের জনগণকে দমন করে নিজেদের এবং তাদের প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করা।
তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তা ও ফারাক্কা সমস্যার সমাধান তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) কীভাবে করবে? অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা কীভাবে সমাধান করবে? কারণ তারা অন্যদের স্বার্থ হাসিলের বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে।’
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৫ নেতাকে বহিষ্কার
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে তাদের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারে নিজেদের শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ অনেক বিরোধী দল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ‘এর জন্য আমাদের অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমাদের অনেককে অত্যাচার ও নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান দানবীয় সরকারকে বিদায় করতে বিভক্তি ও তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির ঊর্ধ্বে উঠে সব বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প এখন নেই। ‘আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নিজেদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। কেউ আমাদের জন্য এটা করবে না, এটা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে।’
তিনি বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাদণ্ড দিয়েছে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধী দলের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, 'দমন-পীড়ন ও গ্রেপ্তার এখনো চলছে। আমাদের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে, কারণ তারা জানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে তাদের ব্যাপক ভরাডুবি হবে।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৫১ নেতা বহিষ্কার