বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করতে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যাচার করে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, 'প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক ও অনেক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব- বিশেষ করে যারা নিজেদের সততার সঙ্গে আপস করেন- তারা স্বৈরাচারী শাসকের (শেখ হাসিনা) পলায়নে কান্নাকাটি করছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে- এমন মিথ্যা প্রচার করে তারা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে।’
'আমরা বিএনপি পরিবারের' আয়োজনে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে আহত রোগীদের দেখতে যান রিজভী।
তিনি বলেন, ভারত যে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাতে এমন ধারণা পাওয়া যায় যে, সহিংস খুনি ও রক্তপিপাসুরা প্রতিবেশী দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করছে।
শেখ হাসিনাকে ভারত নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করায় ভারত তার জন্য মায়া কান্না করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার অপকর্মের জন্য ইসকন থেকে বহিষ্কৃত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করেছে। ‘মনে হচ্ছে দিল্লি থেকে ভারতের একেবারে প্রত্যন্ত প্রান্ত পর্যন্ত তার জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতি হতে পারে না।’
অঢেল রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশকে নতজানু করার ক্ষমতা কারও নেই। ‘প্রচ্ছন্ন হুমকি বা ভয়ভীতি দেখিয়ে এই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যাবে না ‘
আরও পড়ুন: ভারত আধিপত্য বিস্তারে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করছে: রিজভী
তিনি ভারতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সম্প্রতি আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানান।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা (ভারতীয়রা) এতদূর এগিয়েছে যে, আমাদের স্বাধীন প্রিয় মাতৃভূমির পতাকা ছিঁড়ে ফেলেছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী তারা আমাদের কূটনীতিক কর্মকর্তাদের গায়ে হাত তুলে ভয়ংকর ও গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে।’
নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর শেখ হাসিনা যে নিষ্ঠুরতা ও সহিংসতা চালিয়েছেন তা স্বীকার করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতের সমালোচনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বার্ন ইউনিটে যে দৃশ্য দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেছি, অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু আজ (শনিবার) যে নিষ্ঠুরতা দেখলাম তার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। এটা এতটাই হৃদয়বিদারক ছিল যে আমার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিল। মনে হচ্ছিল যেন কোনো হরর ফিল্মের দৃশ্য দেখছি। এর দায় কে নেবে? এই মানুষগুলো কীভাবে বেঁচে থাকবে?’
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর আগে এমন নৃশংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। ‘এই হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী যারা – মন্ত্রী থেকে শুরু করে আমাদের জনগণকে হত্যা, আমাদের ভাইদের পঙ্গু করে দেওয়া এবং এই জঘন্য অপরাধ করার সঙ্গে জড়িত সকলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: সরকারকে ড. মোশাররফ