বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো ধরনের দুরুত্ব নেই, বরং সুসম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনের রাজনীতি হবে ইতিবাচক এবং সব দলই ইতিবাচক হবেন— এটা আমরা আশা করি। সুতরাং বিএনপি যে ঐক্যের কথা বলেছে, তাতে জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। আমি মনে করি, উনারা সঠিক কথা বলেছেন।’
শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. তাহের বলেন, ‘এখন যারা রাজনীতি করছে, অর্থাৎ ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছি, যোগাযোগ রক্ষা করছি এবং এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন বৈষম্য দূর করতে পারবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি আমরা এখন যে পদ্ধতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি, তার চাইতে তুলনামূলক ভালো বলে মনে করি। বিশ্বের প্রায় ৬২-র অধিক দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে এবং এই পদ্ধতিকে আমরা সফল হিসেবে দেখছি। এই পদ্ধতির নির্বাচনের বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রত্যেকটি মানুষের মতকে তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।’
‘আমরা দেখেছি ৫০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত ব্যাক্তির কাছে ৪৯ হাজার ভোটার পাওয়া ব্যক্তির মূল্য থাকে না। কারণ ওই ফলাফল তখন শূন্য হয়ে যায়। পিআর পদ্ধতিতে সারা দেশে যে ভোট পায় সেই ভোটের হার নির্ধারণ করে প্রতিনিধিত্ব আসে।’
এই রাজনীতিক বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে যে দলের ভোটের হার বেশি থাকবে, তাদের প্রতিনিধিত্ব বেশি আসবে। একইসঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন আসছে, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে। সেটাও সকলে একমত হলে বিবেচনায় আনা যেতে পারে।’
আরও পড়ুন: এদেশে আর কোনো মাইনরিটি-মেজরিটি শুনতে চাই না: জামায়াত আমীর
বাংলাদেশের তিন দিকে প্রতিবেশী দেশ হচ্ছে ভারত। জামায়াতে ইসলামী যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তাহেল পররাষ্ট্রনীতি কী ধরনের হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছি এবং সেটি খুবই পরিস্কার। সমতা, অধিকার ও আমাদের নিজস্বতার স্বীকৃতির ভিত্তিতে আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। আমরা মনে করি প্রত্যেক দেশ তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমে পরিচালিত হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেও আমাদের নীতি একই রকম।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘মানুষ যেন দেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগের প্রথা আর নেই; মিথ্যাচার, লুটপাট, অত্যাচার ও দখলের রাজনীতি নেই। আমরা জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখাব। এক মহান বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা ঘরে ঘরে একটি ইতিবাচক সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে চাই।’
জামায়াত কারও ওপর কোনো মত চাপিয়ে দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদেশে নারীদের সম্পূর্ণ অধিকার দেওয়া হবে। অমুসলিমরা নিরাপদে তাদের সম্পূর্ণ অধিকার ভোগ করবে।’
শেখ হাসিনার সমালোচনা করে ডা. তাহের বলেন, ‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে, ইতিহাস কোনো জালেমকে ক্ষমা করে না, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসে না। আমরা তার পদত্যাগ চেয়েছি আর আল্লাহ তাকে দেশত্যাগ করিয়েছেন।
কর্মী সম্মলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসেন, কুমিল্লা মহানগর আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, চাঁদপুর জেলা আমির মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজী, সাবেক আমির মাওলানা আব্দুর রহিম পাটোয়ারী, নায়েবে আমির অ্যাড. মাসুদুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি অ্যাড. মো. শাহজাহান মিয়া, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মাও. আবুল হোসাইন।
সভাপতিত্ব করেন শাহরাস্তি উপজেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল এবং সঞ্চালনায় ছিলেন পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম।