তিনি বলেন, ‘দেশে মৌলবাদী অপশক্তি মাঝেমধ্যে যে ফণা তোলার অপচেষ্টা করে তার পেছনে দল বিশেষের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকে।’
সোমবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম’র সাথে বৈঠক শেষে ভাস্কর্যবিরোধী তৎপরতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আজকে যারা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিচ্ছে, এ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি দেশে ঘাপটি মেরে থাকে, সময়ে সময়ে ফণা তোলার চেষ্টা করে। কোনোভাবেই এদের ফণা তুলতে দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, এ অপশক্তিকে পরাভূত করেই বাংলাদেশ রচিত হয়েছে।’
‘এ মৌলবাদী অপশক্তি, যারা দেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায়, এরা ফণা তোলার চেষ্টা করতে পারত না যদি না তাদের রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা না হত,’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘একটি দল, একটি গোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। অথচ সেই দলের প্রতিষ্ঠাতার ভাস্কর্যও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও তারা এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।’
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে রচিত স্বাধীন বাংলাদেশে মৌলবাদী অপশক্তির কোনো স্থান হবে না, বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ভাস্কর্যবিরোধী অপতৎপরতাকারীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মামলা হওয়ার অর্থই আইনের আওতায় আসা। মামলা হয়েছে এবং সেই মামলা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও নিতে হয়েছে।’
বিএনপি চায় না রোহিঙ্গারা ভালো থাকুক
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরকে বিএনপি যে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলছে তা নিয়ে মন্তব্য চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র দেশের মানুষ এবং রোহিঙ্গারা এ স্থানান্তরকে স্বাগত জানিয়েছে। যে সমস্ত রোহিঙ্গা সেখানে গেছে তারা অত্যন্ত খুশি হয়ে বলেছে, তারা দেশে ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে চায়। এখন বিএনপির এ বক্তব্যে মনে হয়, রোহিঙ্গারা ভালো থাকুক তা তারা চায় না। কারণ ভাসানচরে যে সুব্যবস্থা আছে এটি ইউরোপে যেখানে শরণার্থীদের রাখা হয় তার চেয়েও অনেক ভালো। বিএনপি আসলে চায়, রোহিঙ্গা ইস্যুটা টিকে থাকুক। আর বিএনপি যে সময়ে সময়ে এ নিয়ে কথা বলে, বিএনপির আমলে যে রোহিঙ্গারা এসেছিল তারা এখনও বাংলাদেশে আছে। তাদের সেই দিকে একটু দৃষ্টিপাত করার আহ্বান জানাই।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক করা মন্তব্য ‘দেশে গণতন্ত্র নেই’ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের জন্মটাই অগণতান্ত্রিকভাবে সেনা ছাউনিতে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে, তারা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, তখন দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ হাসে। আর দেশে অবাধ গণতান্ত্রিক চর্চা, পরিপূর্ণ বাকস্বাধীনতা আছে বলেই মির্জা ফখরুল সাহেবসহ বিএনপি নেতারা প্রতিদিন এ ধরনের বিষোদগার করতে পারেন।’
পরিবেশ গবেষক ড. হাছান এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। সেই সাথে আরও অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে যেগুলো পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি কাজ অব্যাহত রাখতে ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের প্রতি আহ্বান জানান।
ফোরামের সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের কাওসার রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বর্তমানের মোতাহার হোসেনও এ সময় বক্তব্য দেন।