ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ব্যাপক লুটপাট, দুর্নীতি ও অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন 'দুর্বল ও ভঙ্গুর' হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ৫০ বিলিয়ন টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, যে কারণে রিজার্ভ কমে গেছে। বর্তমানে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলার। আসলে রিজার্ভ আছে মাত্র ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি আরও বলেন, এই রিজার্ভও কমে যাবে কারণ বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া বিল মেটাতে সরকারকে ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে।
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার উন্নয়ন দেখে মনে হচ্ছে একজন অপুষ্ট ও শ্যামবর্ণ নারীর ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো। একজন দুঃস্থ ও পীড়িত নারীকে প্রসাধনী দিয়ে সাজালে যেমন দেখাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারাও তেমন হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি অসুস্থ।’
ভেঙে পড়া অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের পরিস্থিতি এমন যেন একটি শূন্য অতল গহ্বরে বসবাস করছি, যেখানে পায়ের নিচে মাটি নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ব্যাংক থেকেই ১২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এটা আমার বক্তব্য নয়; এটা সিপিডির বক্তব্য। আমাদের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ এভাবে হারিয়ে গেছে। এটা কি কল্পনা করা যায়?'
শুধু ব্যাংক হিসাব থেকেই ৯২ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘লুটেরা কারা? কারা এই অলিগার্ক? এরা সবাই ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ মানুষ। তারা হয় আওয়ামী লীগের লোক নয়তো আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা। তারা প্রচুর ধন-সম্পদ ও অর্থের মালিক।’
এ সময় রিজভী জানান, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।
'সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে হবে না'- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ স্থান নাকি সেনানিবাস?
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের আমানত রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি সর্বদা জবাবদিহির ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা উচিত ... সাংবাদিকরা সেখানে যেতে পারেন।’
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কীভাবে জনগণের অর্থ লুটপাট করছে সে সম্পর্কে দেশের জনগণ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে জানতে না পারে সেজন্য সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করছেন।
রিজভী বলেন, ‘জনগণ মনে করে, এই ডামি সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে গণতন্ত্র, সত্য ও ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে যাওয়া। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণ প্রথম দফায় যেভাবে নির্বাচন বর্জন করে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল, সেভাবেই তারা সাড়া দেবে।’
মঙ্গলবার ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগ সরকারকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।