বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা এই সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গিলে ফেলেছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন ফখরুল।
এসময় তিনি পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
ফখরুল বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক মন্দার মূল কারণ সরকারের দুর্নীতি। গত ১৪ বছরে প্রতিটি খাতে চুরি করে অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল তা সরকারের কাছে জানতে চাওয়ার অধিকার বিএনপির আছে। ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারবে না। আপনারা (সরকার) রিজার্ভ চিবিয়ে খাননি, গিলে ফেলেছেন।’
রিজার্ভের টাকা পায়রা সমুদ্রবন্দরে যায় এমন মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, রিজার্ভের টাকা বন্দর নির্মাণের জন্য নয়।
তিনি বলেন, ‘রিজার্ভের অর্থ ডলারে আমদানিকৃত পণ্যের বিল পরিশোধের জন্য ব্যবহার করার কথা। দেশে যখন অর্থনৈতিক সংকট থাকে তখন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যও মজুদ অর্থ ব্যবহার করা হয়।’
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে ফখরুল বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দর বন্দরে জাহাজ আসার প্রয়োজনীয় নাব্যতা না থাকায় এটি উৎপাদনশীল ও কার্যকর হবে না। ‘তারা এখন ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে নাব্যতার জন্য সুপার ড্রেজার ব্যবহার করছে। আপনি সেখানে সুপার ড্রেজার বসিয়ে চুরির আরও সুযোগ তৈরি করেছেন।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি বহন করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
আগের দিন, প্রধানমন্ত্রী কার্যত পায়রাতে মূলধন ড্রেজিংসহ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যত উদ্বোধন করেছিলেন, এটিকে মসৃণ অপারেশনের জন্য আরও ভাল সুবিধা দিয়ে সজ্জিত করার লক্ষ্যে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই হয়তো ভাবছেন রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ পায়রা বন্দরে যায়, মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ, সার এবং মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো… কেউ এই টাকা চিবাতে পারে না। সেটা হল (ফরেক্স রিজার্ভ) মানুষের জন্য। আমরা এটি আমদানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছি।’
ফখরুল বলেন, বিএনপির সাম্প্রতিক তিন বিভাগীয় সমাবেশে জনতার ঢেউ দেখে সরকার অস্থির হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির জনসভা ক্ষমতাসীন দলকে এতটাই নার্ভাস করেছে যে তারা এখন পরিবহন মালিকদের ব্যবহার করে বাস-পরিবহন ধর্মঘট চালিয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচি ঠেকানোর চেষ্টা করছে। ‘আপনাদের কি লজ্জা হয় না? আপনারা কি কাপুরুষ! আপনারা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ইউনিয়ন ব্যবহার করে বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বন্ধ করতে ধর্মঘট ডাকছেন।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট করে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিএনপির সমাবেশে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও বিএনপির কর্মসূচিতে জনগণকে যোগদানে বাধা দিতে পারেনি।
দুই বিভাগে বিএনপির পরিকল্পিত সমাবেশ বানচাল করতে রংপুর ও বরিশালে আগাম পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
ফখরুল পরিবহন মালিকদের জনগণের পাশে থাকার এবং জনগণের অধিকার হরণকারী ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারকে সহায়তা করার জন্য ধর্মঘট চালিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার গুলি ও দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলনকে দমন করতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ ও তরুণরা তা হতে দেবে না।
সরকারের বিরুদ্ধে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের অভিযোগও তোলেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘একটা (সরকার) নির্বাচন কমিশন করেছে, যাকে ডিসি-এসপিরাই পাত্তা দেয় না এবং তারা নির্বাচন করতে পারে না।’
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান ফখরুল।