যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোহাম্মদ রইসউদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে দলটির স্থায়ী কমিটি এই দাবি করে।
গত সাত বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ২০১ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ রক্তক্ষয়ী খেলা খেলছে বলে অভিযোগ করেছে দলটির স্থায়ী কমিটি।
শুক্রবার(২৬ জানুয়ারি) বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বিএনপির স্থায়ী কমিটি বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত হওয়ার তীব্র নিন্দা জানায়।
গত সোমবার বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন বিজিবির সিপাহী মোহাম্মদ রইসউদ্দিন।
আরও পড়ুন: বর্তমান সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি: রিজভী
ঘটনার পর বিএসএফ এক বিবৃতিতে দাবি করে, নিহত বিজিবি সদস্য সাদা পোশাকে চোরাকারবারিদের সঙ্গে ছিল।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বিএসএফের ব্যাখ্যাকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বলেছে, কোনো বিজিবি সদস্য লুঙ্গি ও টি-শার্ট পরে চোরাকারবারি দলের সঙ্গে যেতে পারে না। ‘ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুমও বিএসএফের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়।’
দলটি আরও বলেছে, বিএসএফের বিবৃতিটি বানোয়াট এবং ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের 'আধিপত্যবাদী' মনোভাবে উৎসাহিত হয়ে বাহিনী কেবল তাদের হত্যাকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ‘বিএসএফের অপরাধ এবং তাদের নম্রতার মধ্যে সব সময়ই বিশাল ব্যবধান থাকে। তাদের (বিএসএফ) মনোভাব থেকে এমন ধারণা পাওয়া যায় যে, তারা এখনও আদিম ও মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।’
এতে আরও বলা হয়, রইসউদ্দিন হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএসএফের মনগড়া বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। ‘ভারতের উচ্চাভিলাষী নীতির কারণে সীমান্তে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না।’
বিএনপি বলেছে, একজন বিজিবি সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের জনগণকে তাদের আজ্ঞাবহ রাখতে আধিপত্যবাদী বার্তা দিয়েছে।
দলটি বলেছে, ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস ও রক্তাক্ত। ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে।’
আরও পড়ুন: দেশে গণতন্ত্র না থাকায় ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ক্রমশ বাড়ছে: নজরুল ইসলাম
এতে বলা হয়, এতদিন বিএসএফের হাতে সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হলেও এখন সীমান্তে বিজিবি সদস্যরাও নিরাপদ নয়। ‘একটি স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অন্য দেশের সীমান্তরক্ষীদের হাতে নিহত হওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এর সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত।’
বিএনপি আরও বলেছে, এটি গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, শেখ হাসিনার ক্ষমতার লোভে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশকে একটি অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দখলদার আওয়ামী সরকার এখন দেশবিরোধী ঘৃণ্য চক্রান্তের ঘুঁটি। এমনকি এখন বিজিবি সদস্য বিনা কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন।
বিজিবি সদস্য হত্যা ও সীমান্ত হত্যার বিষয়েও সরকারের 'নীরবতা'র সমালোচনা করেছে দলটি।
তিনি বলেন, বিএসএফের 'পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড' এখন সবার জানা। দিল্লির নৃশংসতা এবং ঢাকার নীরবতার কারণে সীমান্তে অনিয়ন্ত্রিত সীমান্ত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। সীমান্তের কাছে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যার ঘটনার বিষয়ে নীরবতা দিল্লির সঙ্গে শেখ হাসিনার চিরস্থায়ী 'রাজনৈতিক সমঝোতার' ফসল।
আরও পড়ুন: জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদ বা সরকার গঠিত হয়নি: ড. মঈন