দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজারের অধিক পর্যটকের ঢলে শিমুল বাগানতলা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় বাগানের চারদিকে দু’দিন ধরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। সাংস্কৃতিক ও কাব্যময় হয়ে ওঠা দিনটি নানা রকম উৎসব নিয়ে পর্যটকরা শিমুল বাগানে উদযাপন করেছে ভালোবাসার ও একই সাথে বাসন্তী এ দিনটি।
শিমুল বাগানটি জেলার তাহিরপুর উপজেলার রূপবতী যাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত। একদিকে মেঘালয় পাহাড় অন্যদিকে রূপের নদী যাদুকাটা। তার পাশেই ৩ হাজার শিমুল গাছে লাল লাল ফুল ফুটেছে। ফাগুন এলেই এখানে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী এসে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। এছাড়া সম্প্রতি ছোট পরিসরে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে শিমুল বাগানের ভেতরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ক্যাফেও গড়ে উঠেছে। যাতে তীব্র গরমে পর্যটক আর দর্শনার্থীদের পিপাসা নিবারণ সহজ হয়েছে।
২০০৩ সালের দিকে ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে বৃক্ষ প্রেমিক জয়নাল আবেদীন তিন হাজার শিমুল গাছ লাগানোর মাধ্যমে এই বাগান শুরু করেন। তিনি মারা গেলে তার ছেলেরা এ বাগানকে পরিচর্যা করে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলছেন। কাব্যময় এ বাগানটিতে পুরো ফাল্গুন মাস জুড়ে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।
বাগানে ঘুরতে আসা সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ছাত্রী আয়েশা আক্তার তার মনের ভাব কবিতার পংক্তি দিয়ে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘এই ফাগুনে সাঝিয়েছি অঞ্জলি, আমার হৃদয়ের থালা ভরে। দেখা হোক, আদর হোক ভালোবাসায়। দু’টি হৃদয় একটি থালায়, শিমুল ও পলাশের ফুলে ফুলে।’
দর্শনার্থীদের সাজগোছ ও মুখে অনাবিল হাসি দেখে মনে হয় আগুন রাঙা এ ফাগুনে প্রকৃতিতেই শুধু উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়ায় না, রঙ ছড়ায় প্রতিটি তরুণ প্রাণে। প্রাণের টানে, আর প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মন হয়ে ওঠে উত্তাল, বাঁধনহারা। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্বণ, প্রকৃতির মিলন সবই এ বসন্তেই। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। এভাবেই কেটেছে শিমুল বাগানে বসন্তের এই প্রথম দিন।