দেশের শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব এ মানুষটি ভূষিত হয়েছেন একুশে পদকসহ নানা সম্মানে। তার মৃত্যুতে বাঙালি সংস্কৃতির দিগন্তে শূন্যতার সৃষ্টি হলো।
কামাল লোহানীর জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সোনতলা গ্রামে। বাবার নাম আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী। মা রোকেয়া খান লোহানী।
কামাল লোহানী প্রথমে কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৪৭ এর দেশভাগের পরের বছর তার পরিবার পাবনা চলে আসে।
সেখানে কামাল লোহানী পাবনা জিলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে তার।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যোগ দেয়ার মাধ্যমে ছাত্রাবস্থায় কামাল লোহানীর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৫৩ সালে নুরুল আমিনসহ মুসলিম লীগ নেতাদের পাবনা আগমন প্রতিরোধে আন্দোলন গড়ে তোলায় পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যদের সরঙ্গ গ্রেপ্তার হন কামাল লোহানী।
১৯ বছর বয়সে প্রথম কারাগারে যান তিনি। ১৯৫৪ সালে আবারও গ্রেপ্তার হন। কারাবাসের সময় তিনি কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে দীক্ষিত হন এবং আজীবন সেই আদর্শে অবিচল ছিলেন। ১৯৫৫ সালে গ্রেপ্তার হলে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে একই কারাকক্ষে বন্দিজীবন কাটান। সেই বন্দি দিনগুলোতেই তিনি সান্নিধ্যে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর।
কর্মজীবনে কামাল লোহানী দৈনিক আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তাসহ বিভিন্ন পত্রিকার কর্মরত ছিলেন।
তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে দু-দফায় যুগ্ম-সম্পাদক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হন। তিনি গণশিল্পী সংস্থার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে কামাল লোহানী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান এবং সাড়ে চার বছর এ পদে ছিলেন।
এরপর মার্কসবাদী আদর্শে ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ক্রান্তি। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পযর্ন্ত তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন। ২০১৫ সালে কামাল লোহানী সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন।
ব্যক্তিজীবনে ১৯৬০ সালে দীপ্তি লোহানীকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের দুই মেয়ে এক ছেলে। তারা হলেন- সাগর লোহানী, বন্যা লোহানী ও ঊর্মি লোহানী। বেশ কয়েক বছর আগে তার স্ত্রী দীপ্তি লোহানী মারা যান।