লবঙ্গ গাছের ফুলের শুকনো কুঁড়িই হলো লবঙ্গ। লবঙ্গ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম সিজিজিয়াম অ্যারোমাটিকাম। এটি একটি চিরহরিৎ উদ্ভিদ যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় পরিবেশে বৃদ্ধি পায়। লবঙ্গ ইন্দোনেশিয়ার মালুকু দ্বীপপুঞ্জের (বা মোলুকাস) স্থানীয় এবং সাধারণত মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এশিয়ান, আফ্রিকান, ভূমধ্যসাগরীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির লবঙ্গ রান্নায় স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এর ভেষজ ও নানাবিধ পুষ্টিগুণের কারণে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার, পানীয়, সাবান, টুথপেস্ট, ওষুধ, সুগন্ধী ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। চলুন, লবঙ্গের উপকারিতার পাশাপাশি জেনে নিই কোন কোন ক্ষেত্রে তা ঝুঁকিপূর্ণ।
লবঙ্গের উপকারিতা
পেটের সমস্যা সমাধান
হজমশক্তি বাড়াতে এবং পাকস্থলি ও অন্ত্র সম্পর্কিত জটিলতা নিয়ন্ত্রণে লবঙ্গ অনেক কাজ দেয়। তদুপরি, ভাজা লবঙ্গ খাওয়া এমনকি তাদের চেতনানাশক বৈশিষ্ট্যের কারণে বমি হওয়া বন্ধ করতে পারে। এটি আলসারের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর শোধনকারী হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
যকৃতের সুরক্ষা
লবঙ্গে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা যকৃতকে রক্ষা করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে বিপাক যকৃতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কমিয়ে ফ্রি র্যাডিক্যাল উৎপাদন করে এবং লিপিড প্রোফাইল বাড়ায়। এক্ষেত্রে, লবঙ্গের নির্যাস তাদের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
লবঙ্গ থেকে নির্যাস নির্দিষ্ট উপায়ে ইনসুলিন তৈরি করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
হাড় সংরক্ষণ
লবঙ্গের হাইড্রো-অ্যালকোহলিক নির্যাসগুলো হাড়ের ঘনত্ব এবং হাড়ের খনিজ উপাদান সংরক্ষণে সহায়ক হতে পারে। এমনকি অস্টিওপোরোসিসের ক্ষেত্রে হাড়ের প্রসারণ শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
আয়ুর্বেদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিকাশ ও সুরক্ষায় কার্যকরী একটি উদ্ভিদ হল লবঙ্গ। লবঙ্গের শুকনো ফুলের কুঁড়িতে এমন যৌগ রয়েছে যা শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
মাড়ির রোগ যেমন মাড়ির প্রদাহ এবং পেরিওডোনটাইটিস কমানোর জন্য লবঙ্গ খাওয়া যেতে পারে। লবঙ্গের নির্যাস মুখের রোগজীবাণুগুলোর বৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, যা মুখের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। দাঁতের ব্যথার জন্য, দাঁত তোলার সময় ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য লবঙ্গ সরাসরি মাড়িতে প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া লবঙ্গ মুখ ও গলার প্রদাহের জন্য প্রতিরোধক হিসেবে ত্বকে ভালো কাজ দেয়।
মাথাব্যথা নিরাময়
লবঙ্গ ব্যবহারে মাথাব্যথা কমে যেতে পারে। কয়েকটি লবঙ্গের পেস্টের সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে তা এক গ্লাস দুধের সাথে যোগ করে তৈরি মিশ্রণ দ্রুত ও কার্যকরভাবে মাথাব্যথা কমায়।
আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়