এসআই আকবর হোসেন ভুইয়াসহ হত্যার সাথে জড়িত সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে রবিবার বেলা ১১টা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি এ অনশনে বসেন। এ সময় আশপাশের বাসিন্দারাও তাদের সাথে সংহতি জানিয়ে অনশনে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে রায়হান হত্যা: পুলিশ সদস্য হারুন ৫ দিনের রিমান্ডে
হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে অনশনস্থলে বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন প্রদর্শন করা হচ্ছে। অনশনরত রায়হানের পরিবারের সদস্যদের মাথায় কাফনের কাপড় (সাদা কাপড়) বাঁধা রয়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রায়হানের মা বলেন, হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চললেও মূল অভিযুক্ত আকবর এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। সে কোথায় আছে-তাও এখনো স্পষ্ট নয়। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আকবরসহ ৭ জনকে বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা হলেও তাদের মধ্যে কেবল কনস্টেবল টিটু ও হারুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এসএমপির পুলিশ লাইন্সে থাকা আসামিসহ এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাদের অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন সালমা বেগম।
গত ১১ অক্টোবর রায়হানকে হত্যার পর থেকেই পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে টানা বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। এর আগে রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে সংবাদ সম্মেলন করে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন মা সালমা বেগম। তাতেও কাজ না হওয়ায় আজ থেকে অনশন শুরু করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর ভোরে রায়হান আহমদ (৩৪) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকালে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এ মামলায় ২০ অক্টোবর পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও ২৪ অক্টোবর কনস্টেবল হারুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই।
রায়হান নিহতের ঘটনায় আন্দোলনমুখর হয়ে পড়ে সিলেট। সিলেট মহানগর পুলিশকে নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই সমালোচনার মুখে মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা। আর এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভূইয়া ১২ অক্টোবর থেকে পলাতক রয়েছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে ১১ অক্টোবর রবিবার ভোররাত ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
রায়হান স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।