চাল সরবরাহ না করে চুক্তি উপেক্ষা করায় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা হিসাবে একই সাথে ওই চালকলগুলোর পুরো জামানত বাজেয়াপ্তসহ আগামী দুই মৌসুম চুক্তির বাইরে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহে কুষ্টিয়া জেলায় ২৯টি অটো ও হাসকিংসহ সব মিলিয়ে ৫৩৫টি মিল স্থানীয় খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ ২৬৫টি চালকল সমুদয় চাল সরবরাহ করে। ২৫৮টি হাসকিং ও ৩টি অটোরাইস মিল মালিক একবারেই চাল সরবরাহ না করে চুক্তি লঙ্ঘন করে। তবে ১২টি হাসকিং মিল মালিক আংশিক চাল সরবরাহ করে।
এদিকে, দেশব্যাপী চাল সংগ্রহ ধীর গতির কারণে ৩১ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হলেও কুষ্টিয়ায় সফল হয়নি সংগ্রহ অভিযান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ অধিকাংশ মিলের চাল সরবরাহ থেকে বিরত থাকায় এবারের বোরো মৌসুমে সংগ্রহ অভিযান পুরোপুরি সফল হয়নি। এবারের বোরো মৌসুমে সরকার নির্ধারিত কেজিপ্রতি দর ছিল ৩৬ টাকা। জেলায় চাল সংগ্রহের টার্গেট ছিল ৩৪ হাজার ২শ মেট্রিক টন। সর্বনিন্ম ৫ মেট্রিক টন থেকে সর্বোচ্চ ৯ মেট্রিন টন চাল সরবরাহের জন্য মিল মালিকরা চুক্তিবদ্ধ হন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাহসিনুল হক জানান, নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জেলায় বোরো চাল সংগ্রহ অভিযানের ৬৬ ভাগ মত অর্জিত হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সূত্র মতে, মূল্যসহ চাল উৎপাদন খরচ সরকার নির্ধারিত কেজি প্রতি চালের দর থেকে ৪-৫ টাকা বেশি পড়ে যাওয়ায় মিলাররা সংগ্রহ অভিযান শুরু থেকেই ক্ষতিতে চাল সরবরাহে অনীহা দেখিয়ে আসছিল। খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে চুক্তিবদ্ধ মিলরাদের সরবরাহের জন্য বার বার তাগিদ দিয়েও সংগ্রহ অভিযানে সফল করতে ব্যর্থ হন। তবে লাভ-ক্ষতির হিসাব না কষে চুক্তির দায়বদ্ধতা থেকে ছোট-বড় চাল কলের মালিকদের অধিকাংশই গুদামে চাল সরবরাহ করেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরও জানান, যারা চুক্তি সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করেছে এমন ২৬১টি চালকলকে ইতোমধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের জামানত পুরোটাই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই সাথে আগামী দুই মৌসুম তাদের চুক্তির আওতার বাইরে রাখা হবে। একই সাথে যারা আংশিক চাল সরবারাহ করেছে তাদেরও বাকি জামানত বাজেয়াপ্তসহ এক মৌসুমের জন্য চাল সরবরাহ থেকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খাজানগর মোকামের দেশ এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজের সত্বাধিকারী আব্দুল খালেক জানান, লাভ-ক্ষতি উভয় দিক মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। চাল সরবরাহে এবার লোকসান মেনেই চুক্তির দায়বদ্ধতা থেকে বরাদ্দকরা পুরো চাল তিনি সরবরাহ করেন।
অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, এবার ধানের বাজার দর বাড়তি ছিল। এছাড়া বোরো মৌসুমে মোটা ধানের উৎপাদনও কম। ফলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে উৎপাদিত চালের দর কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা বেশি। কিন্তু তা সত্বেও চুক্তিবদ্ধ চালকল অধিকাংশ মালিকরা ক্ষতিতে সরকারকে চাল সরবরাহ করেন।
এদিকে, বোরো চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হতে না হতেই চলতি মাসেই আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এবার আমন চালের সরকার নির্ধারিত দর ৩৭ টাকা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাহসিনুল হক জানান, আমনের বর্তমান বাজার দর প্রতি কেজি ৪০ টাকার বেশি। আর সরকার নির্ধারিত দর ৩৭ টাকা। যে কারণে এখন পর্যন্ত কোনো মিলার তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়নি।
বোরো মৌসুম মোটামুটি সফল হলেও চলতি আমন মৌসুম কোনভাবেই সফল হবে না বলে এই কর্মকর্তা আশঙ্কার প্রকাশ করেন তিনি।