সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা দেননি চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও নেতারা।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন থানার অধীনে মোট ৪৫৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন থানায় জমা হয়েছে ৩৬১টি। বাকি ৯৩টি অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন থানার অধীনে ৩৮৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। এর মধ্যে ৩৩৫টি বিভিন্ন থানায় জমা হয়েছে। বাকি ৫৩টি অস্ত্রের খোঁজ মেলেনি।
অস্ত্র জমা দেননি এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছিলেন। সরকারের নির্দেশনানুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এক নলা বন্দুক ও পিস্তলটি জমা দেননি তিনি।
আরও পড়ুন: যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১০ দিনে ১৪৪ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৬৪
দ্রুত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দুটি উদ্ধার এবং মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।
যৌথবাহিনী তার এই অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর রয়েছে বলেও জানা গেছে।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর নামেও ইস্যু রয়েছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে একটি শটগান ও আরেকটি পিস্তল। সরকারের পক্ষ থেকে লাইসেন্স বাতিল করে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানেননি তিনি।
এছাড়াও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনির নামে লাইসেন্স করা একটি পিস্তল থানায় জমা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, নানা সময় মানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ফারাজ করিম চৌধুরী। তিনি ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে। নিরাপত্তার কথা বলে অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন আলোচিত ফারাজ। তবে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর যথাসময়ে রাউজান থানায় অস্ত্র জমা দেননি তিনিও।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, নির্ধারিত সময়ে ফারাজ করিম চৌধুরীর অস্ত্র থানায় জমা দেওয়া হয়নি। তবে পলাতক অবস্থায় থাকা ফারাজ করিম ফেসবুক পোস্টে রাজধানীর একটি থানায় অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা জানান।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মোস্তাফিজ, নদভী, সনি ও ফারাজ ছাড়াও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দেননি।
এই তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীও। তার নামে ইস্যু করা ১ নলা বন্দুক জমা দেননি তিনি।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন ও সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘বেশিরভাগ অস্ত্র নির্দিষ্ট সময়ে জমা হয়েছে। কিছু কিছু অস্ত্র যে থানার অধীনে ইস্যু হয়েছিল, সেখানে জমা হয়নি। অন্যান্য থানায় জমা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনও আমরা সংগ্রহ করছি। আর জমা না হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির প্রভাবশালী নেতারা। বন্ধ রয়েছে তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনও। অনেকে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এ কারণে অনেকের পক্ষে লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কয়েকজন নেতা।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশীয় অস্ত্র জব্দ, ৪ যুবক গ্রেপ্তার