চলতি মৌসুমে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে।
ভালো ফলন হওয়ায় খুশি আম চাষীরা। আর এখন আমের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এরই মধ্যে আমের আকার বড় হয়েছে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করবে। আর সেই সঙ্গে আমের বাজার দর ভালো পাওয়া যাবে এমন আশায় বুক বেঁধে আছেন আম চাষীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আম। এবছর মৌসুমের শুরুতে আম বাগানগুলো মুকুলে ছেয়ে যায়। পরবর্তিতে টানা খরার কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও গাছে গাছে প্রচুর পরিমানে আম হয়েছে। গাছ গুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে বাহারি জাতের আম। আর এসব আমের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগানিরা। আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় এ নিয়ে উৎসাহ আর উদ্দীপনার যেন শেষ নেই আম চাষিদের।
আম চাষীরা জানান, প্রচন্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে এবার আমের আকার কিছুটা ছোট হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে পাকা আম আসতে শুরু করবে বলে তাদের ধারণা।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখীর কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে শার্শার আম চাষীরা
সদর উপজেলার নশিপুর এলাকার আম চাষী সেরাজুল ইসলাম বলেন, আল্লাহ দিয়েছে এবার আমের অবস্থা খুব ভালো আছে। এবার গাছে গাছে ভালো মুকুল হয়েছিলো। এখন প্রচুর আম আছে। এবার খরার বছর। পানি সেচ দিয়ে আমকে বাঁচিয়ে রেখেছি। সব ধরনের পরিচর্যা করেছি। গাছে গাছে এখন আম ঝুলছে। বড় ধরনের ঝড় ও শিলা বৃষ্টি যদি না হয় তাহলে এবার ফলন ভালোই হবে আশা করছি। আমের আকার বড় হয়ে গেছে। এখন পুষ্ট হয়ে গেছে। আম পাকতে ধরেন আর পাঁচ থেকে সাতদিন সময় লাগবে। তবে খরার কারণে এবার আমের আকার একটু ছোটো হবে।
একই এলাকার আরএক আম বাগানি আব্দুর রাকিব বলেন, শুনলাম এবার প্রশাসন আম পাড়ার কোনো সময় বেধে দেয়নি। সময় বেধে না দেয়ার কারণে আমরা খুশি। কারণ হলো যে প্রশাসন যখন সময় বেঁধে দেয় তখন অনেক সময় অনেক আম কিন্তু আগে পেকে যায়। সময় বেঁধে দেওয়ার কারণে আমরা কিন্তু পাকা আম বাজারজাত করতে পারিনা।
এতে আমরা তখন ক্ষতিগ্রস্ত হই। এবার যেহেতু সময় বেঁধে দেয়া হয়নি আমরা আশা করছি যে আম যখন পাকবে আমরা তখন সে আম বাজারজাত করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, এবছর এখন পর্যন্ত আমের জন্য সবকিছু ভালো আছে। আমের বাজার দরটা যদি ভালো থাকে তাহলে আশা করছি লাভের মুখ দেখতে পাব।
যাদুপুর এলাকার আম চাষী আজিজুল জানান, এবার গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুল এসেছিলো। পরে মহা ও খরায় মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হলেও প্রচুর পরিমাণে আম হয়েছে। এবার চার জাতের আম ভালো ধরেছে। এগুলো হলো, ফজলি, খিরসাপাত,বম্বাই খিরসা ও ল্যাংড়া। তবে এবার খরার কারণে আমের আকার একটু ছোট আছে।
আম চাষী মিঠু বলেন, এবার আমের ফলন খুব ভালো। ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও সামান্য ক্ষতি হলেও এবার সার্বিকভাবে প্রচুর পরিমাণ আম আছে। তবে আনাবৃষ্টি খরা ও গরমে যে অবস্থা তাতে আম পাকার সময় হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আম পেকে যাবে। প্রথমে গুটি জাত গোপালভোগ আম পাকবে। এরপর খিরসাপাত, ল্যাংড়া, ফজলি, আমরুপালী, বারি-৪ ও আশ্বিনা আম পর্যায়ক্রমে পাকবে।
কৃষি বিভাগের হিসেবে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ থেকে এবার চার লাখ ৪০ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর তিন লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিলো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার জানান, এবার মুকুল বেশি, আমও বেশি ধরেছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের ফলন খুব ভালো হবে। এখন খরা চলছে। এ সময় আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি গাছে ঠাণ্ডা পানি স্প্রে করার জন্য।
তিনি আরও জানান, এ বছর আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়নি। গাছে আম পাকা দেখা দিলেই আম পাড়া যাবে ও বাজারজাত করা যাবে। অপরিপক্ক আম বাজারজাত করা যাবেনা। আম পাকাতে কোনো কেমিকেল ব্যবহার করা যাবেনা। নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম বাজারজাত নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হবে ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পর্যাপ্ত মুকুল আসলেও পরিচর্যা খরচ বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছেন আম চাষিরা