জামালপুরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দুই বছর আগে মারা যাওয়া এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মৃত ছাত্রলীগ নেতার নাম শফিকুল ইসলাম। তিনি পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ছিলেন।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জামালপুর থানায় পৌর শহরের ফুলবাড়িয়া দড়িপাড়া এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে হায়দার আলী বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।
সফিকুল ইসলামের মৃত্যু সনদ থেকে জানা যায়, গত ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়েছে এবং তাতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ক্যান্সার।
সফিকুল ইসলামের বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেওয়া বলেন, ‘আমার ছেলে ২ বছর আগে অকালে মারা গেছে, ছেলে মারা যাওয়ার কষ্ট ও শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমিসহ আমার পরিবার। তার ওপর মৃত পুত্রের নামে মামলা হওয়ার বিষয়টি আমার জন্য অনেক কষ্টদায়ক।’
তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘মরেও কি মানুষ শান্তি পাবে না। আমার মৃত ছেলের নামে যারা মিথ্যা মামলা দিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই।’
প্রয়াত সফিকুল ইসলামের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, দুই বছর পূর্বে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে তার বড় ভাইয়ের মৃত্যু হয়। ছাত্রজীবনে তার বড় ভাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
মৃত মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের হওয়ায় এলাকাবাসীও ক্ষোভ প্রকাশ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের মতে, ‘আমরা যারা জীবিত আছি তাদের নামেও যে মামলা হবে না এটার নিশ্চয়তা কে দেবে।’
এ বিষয়ে মামলার বাদী হায়দার আলী বলেন, ‘মামলার এজাহারে যা লেখা আছে, তার বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
জামালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহব্বত কবির জানান, ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০/১৬০ জনকে আসামি করে হায়দার আলী জামালপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। যিনি মামলা করেছেন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব তার।
তদন্তে সফিকুল ইসলাম মৃত প্রমাণিত হলে মামলা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকাল ৪টার দিকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে একজন মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দেওয়ার উদ্দেশ্যে রক্তদাতা ডোনার তারিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন হায়দার আলী। হাসপাতালের ক্যাম্পাসে পৌঁছালে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘটনায় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দুর্বৃত্তরা সেখানে অবস্থান নেয়। আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। হামলায় হায়দার আলীর সঙ্গে থাকা তারিফুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়। তাদের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও তারিকুলের পকেটে থাকা তার ব্যবসার নগদ ৩৮ হাজার টাকা ও গলায় থাকা ১৪ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যায়।
মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে জামালপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুকে। এছাড়া ৭৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে দু’বছর পূর্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী জামালপুর শহরের পালপাড়া গ্রামের মৃত নূরুল ইসলাম মেম্বারের পুত্র সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রয়াত সফিকুল ইসলামকে।