তীব্র তাপদাহের কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা সদর হাসপাতাল, খুলনা শিশু হাসপাতাল, খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না।
রোগীরা শয্যা না পেয়ে হাসপাতালগুলোর মেঝে, বারান্দা এমনকি সিড়িতেও অবস্থান নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছেন না তারা।
একই অবস্থা খুলনা সিটি হাসপাতাল, গাজী হাসপাতাল, আদ-দ্বীন হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও।
খানজাহান আলী থানার মীরের ডাঙ্গায় অবস্থিত সরকারি খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাসপাতালটিতে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ বা শিশু কনসালটেন্ট না থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন স্বজনদের।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহ: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ
অন্যদিকে, হাসপাতালটিতে ওষুধ ও স্যালাইনের পর্যাপ্ততা থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ জনবল সংকট এবং জরাজীর্ণতার কারণে বিভাগীয় এ সংক্রামণ ব্যাধি হাসপাতালটি থেকে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তীব্র তাপদাহের কারণে চলতি মাসের শুরু থেকেই হাসপাতালটিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি বমি, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
চলতি মাসের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩ শতাধিক। ভর্তি রোগী ছাড়াও প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন।
হাসপাতালে ভর্তি হতে অনিচ্ছুক এসব রোগীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালটিতে রয়েছে মাত্র ২০টি শয্যা। এর মধ্যে ১০টি শয্যা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য বরাদ্দ থাকলেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিজস্ব উদ্যোগে ১৪টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি শয্যাগুলো অন্যান্য সংক্রামক রোগীর জন্য বরাদ্দ।
পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড নেই। নেই কোনো ক্যাবিন ব্যবস্থা। একই ওয়ার্ডে পুরুষ ও নারীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর চাপ বেশি হলে ভর্তি ১৫ নম্বর রোগী থেকে পরবর্তী রোগীগুলোকে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহ: হিটস্ট্রোকে আরও ৩ জনের মৃত্যু
প্রতিদিন শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী ৪-৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেও শিশু বিশেষজ্ঞ বা শিশু কনসালর্টেন্ট না থাকায় এ সব শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা বা পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতালটিতে শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, বেড কিংবা কেবিনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শিশুরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালটি থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের স্বজনদের। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাদেরকে শিশু হাসপাতাল কিংবা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুঁটতে হচ্ছে।
খুলনা শিশু হাসপাতালে অবস্থা আরও করুণ। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আল-আমিন রকীব ইউএনবিকে জানান, আগে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে যেখানে ৪ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো এখন সেখানে গত এক সপ্তাহ ধরে ৭-৮ শত শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশু হাসপাতালে ২৭৫টি শয্যা থাকলেও এখন রোগী রয়েছে দ্বিগুণ।
খুলনা শিশু হাসপাতালে বটিয়াঘাটা থেকে ৩ বছরের শিশু আনিকাকে নিয়ে আসা তার বাবা রহিম শেখ বলেন, ‘গরমে তার সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। সকাল ৮টায় এসেছি। এখনও ডাক্তার দেখাতে পারি নাই। বেশির ভাগ শিশু জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘হাসপাতালে রোগী রাখার জায়গা নেই। হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি আছে। এদের বেশিরভাগ শিশু ও বৃদ্ধ।’
আরও পড়ুন: মেহেরপুরে বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা