সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিলে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে গোয়াইনঘাট থানার পুলিশ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছে।
আটক হওয়া আসামিরা হলো-উপজেলার মুজিব নগর গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে জব্বার মিয়া, একই গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া ও বুধিগাঁও হাওর গ্রামের হারুণ অর রশিদের ছেলে সেবুল মিয়া।
তাদের মধ্য থেকে আসামি বাচ্চু মিয়া ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।
অপর দুইজনও পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ জানান, আসামি বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন এবং মাঝে মধ্যে ভারতীয় খাসিয়াদের বাগান থেকে সুপারি চুরি করতেন। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় চুরিরও অভিযোগ রয়েছে।
১১ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া জব্বারের ঘরে বসে এক সঙ্গে ইয়াবা সেবন করেন। ইয়াবা সেবনের এক পর্যায়ে তারা তিনজন মিলে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাচ্চু, জব্বার ও সেবুল মিলে কেক, বিস্কুট আর কোমল পানীয়ের লোভ দেখিয়ে তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাজার থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে স্থানীয় একটি টিলায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা তিনজন মিলে দলবদ্ধভাবে ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করতে থাকে।
একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী বাধা দিলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং লাঠি ও পাথর দিয়ে ওই নারীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পরদিন ১২ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয়রা মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত ওই নারীর বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পরে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শেখ মো. সেলিম, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ এবং গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
একই সঙ্গে সিআইডি ও পিবিআই’র ফরেনসিক টিম অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় শনাক্তের জন্য লাশের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ঘটনার আলামত সংগ্রহ করেন।
এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ১২ ডিসেম্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সিলেটের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের দিকনির্দেশনায় এই মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) এমরুল কবির এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত এবং আটক করেন।
তাদের মধ্যে জব্বার মিয়াকে ১৫ ডিসেম্বর ও বাচ্চু মিয়াকে ১৮ ডিসেম্বর আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয় এবং সেবুল মিয়াকে ১৯ ডিসেম্বর রাতে আটক করা হয়।
তাদের দেয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি পাথরের খণ্ড ও নিহত নারীর পরিহিত কাপড়-চোপড় এবং ব্যবহৃত কম্বলের পোড়া অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি।
এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১২ ডিসেম্বর তামাবিল স্থলবন্দর সংলগ্ন মুজিবনগর এলাকার একটি টিলা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক নারীর বিবস্ত্র এবং রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাত ওই নারী দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় ঘুরাঘুরি করতেন। রাতের বেলা তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাজারে কাশেম পাগলার ভাঙারির দোকানের সামনে এবং আশরাফের বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত ঘরে রাত্রিযাপন করতেন তিনি।