পঞ্চগড়ে বেক্সিমকোর প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা হারুন প্রধানকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার দুপুরে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী।
গ্রেপ্তার হারুন প্রধান তেঁতুলিয়ার দেবনগড় ইউনিয়নের সাতমেড়া বাসামোড় এলাকার মৃত গফুর উদ্দীপ্রন ধানের ছেলে।
জানা যায়, চলমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশ ও জনগণের কল্যাণে দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক এবং বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড ও বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশিষ্ট শিল্পপতি ওসমান কায়সার চৌধুরীর নেতৃত্বে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় দুটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ৩০ মেগাওয়ার্ড এবং ৫০ মেগাওয়ার্ড ক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় আ.লীগ নেতা হারুনুর রশিদ হারুন প্রধানের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করেন। তবে জমি অধিগ্রহণের প্রায় তিন বছর পার হলেও বেক্সিমকোকে জমি বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করে এবং ভুয়ো দলিল দিয়ে কালক্ষেপণ করে। এরপর এই দুই প্রকল্পের জন্যে প্রায় শত কোটি টাকা আত্নসাৎ করে হারুন প্রধান ও তার সহযোগীরা আত্মগোপন করে।
বেক্সিমকো লিমিটেড তাদের কোম্পানির সঙ্গে প্রতারণার ও টাকা উদ্ধারে প্রথমিক পর্যায়ে একটি প্রজেক্টের পক্ষে ঢাকার ধানমন্ডি থানায় ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
আরও পড়ুন: আইন মেনেই পুলিশ বিএনপির ৫৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে: আইজিপি
দুটি প্রজেক্টের মধ্যে প্রথম মামলায় একটি প্রজেক্টে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার মামলার দ্বিতীয় আসামি হারুন প্রধানকে পঞ্চগড় থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এর আগে গত ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি মডেল থানায় বাবর মিয়াকে (৬০) প্রধান ও হারুন অর রশিদ প্রধানকে দ্বিতীয় করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এর ডেপুটি ম্যানেজার আল মামুন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকার ডিবি পুলিশ পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়ন থেকে মামলার দ্বিতীয় আসামি হারুন প্রধানকে গ্রেপ্তার করে।
একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হারুন প্রধানসহ অপর অভিযুক্তরা ১১৫ একর ২৪ শতাংশ জমি বিভিন্ন ভূয়া ও জাল জালিয়াত দলিলের মাধ্যমে কোম্পানির নামে ক্রয়ের কথা বলে ওসমান কায়সার চৌধুরী এবং বিভিন্ন মানুষের নামে ১১৪ টি ভূয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এবং করতোয়া সোলার লিমিটেড এর নামে ৩১ টি ভূয়া সাব-কবলা দলিলের রেজিস্ট্রি দেখিয়ে ১৬ একর জমি কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেয়। তারা প্রতারণামূলকভাবে তাদের নামে-বেনামে এবং তাদের বিভিন্ন কোম্পানি ও ফার্মের নামে বাদীর সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে বলে জানা যায়।
অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ২য় প্রকল্পের জন্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক বিনিয়োগ বিদেশ থেকে হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতার জন্য এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় সরাসরি ২য় প্রকল্পের নামে কোনো প্রকার মামলা করা সম্ভব হয়নি।
তবে বিদেশি প্রকল্পের পক্ষে বেক্সিমকো আলাদা মামলার কথা ভাবছে এবং সেই প্রকল্পের স্বার্থে হারুন প্রধান সহ তার সহযোগী, দলবল ও ভুয়া দলিল তৈরি, রেজিস্ট্রি কাজে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মোট ১৯২ টি মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি মামলা করা হয়েছে। বাকি ১৯১ টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় খুনের ১৫ বছর পর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার