কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, বাংলাদেশে আর কখনো যেন ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ফিরে আসছে না পারে সেজন্য নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে। এ লড়াইয়ে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশের অন্যতম উৎস সাংবাদিকতা। তাই সাংবাদিকদের সবসময় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। তারা এখনো নানা রূপে ফিরে আসতে চাইছে। এর মূল কারণ গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার গঠনতন্ত্র এখনো তৈরি হয়নি। যারা নতুন গঠনতন্ত্র চায় না, তারা ফ্যাসিবাদে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে মন্তব্য করেন এই রাষ্ট্রচিন্তক।
এই সময় সকল মত, ধর্ম ও ঐতিহ্যের স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব দেন তিনি। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর এর গুরুত্ব উল্লেখ করে তা বিদেশিদের না দেওয়ার দাবি জানিয়ে বন্দরের সব ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধের আহ্বান জানান ফরহাদ মজহার।
চট্টগ্রামকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘হাটহাজারীর মতো অঞ্চলে মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি অবস্থিত। যেখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় এবং সামাজিক আচারে অংশ নিচ্ছেন। এই ঐতিহ্য যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।’
তিনি বলেন, আর কখনো যেন দাড়ি-টুপি বা পাঞ্জাবি পরা কাউকে জঙ্গি কিংবা গেরুয়া বসন পরা কাউকে বিদেশি দালাল হিসেবে আখ্যায়িত না করা হয়।
সংবিধান বনাম গঠনতন্ত্র; দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গঠনতন্ত্র ও সংবিধান এক নয়। সংবিধান একটি আইনি কাঠামো মাত্র, যেখানে গঠনতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র ও সংগঠন পরিচালনার মূল দর্শন। ড. কামাল হোসেন সংবিধানকে রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন, যা জাতির জন্য বিভ্রান্তিকর।’
ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশের সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘আইডিএল (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লিগ) বিলুপ্ত করে জামায়াতে ইসলামী নামে রাজনীতিতে পুনরায় আত্মপ্রকাশ রাজনৈতিক দুরদর্শিতার ঘাটতি প্রকাশ করে।’
পড়ুন: পুরোনো ব্যবস্থায় নয়, নতুন ব্যবস্থাপনায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে: জামায়াত আমির
সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার একটি অংশ প্রেস ক্লাব থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের উচ্ছেদ করে। বর্তমানে এ ক্লাব দেশপ্রেমিক, পেশাজীবী সাংবাদিকদের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে।’
তিনি আরও জানান, এখনো কিছু চক্র প্রেস ক্লাবকে ঘিরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের সজাগ থাকতে হবে। যারা সাংবাদিকতার আড়ালে ফ্যাসিবাদের চর্চা করে, তাদের প্রেস ক্লাবে কোনো স্থান নেই।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল হক, অধ্যাপক আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক সাইমা আলম, রাষ্ট্রচিন্তক মেজর (অব.) ফেরদৌস, কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, ইউএনবি চট্টগ্রাম প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম শিল্পী, বাসস’র সিনিয়র সাংবাদিক মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মওলা মুরাদ প্রমুখ।