বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় তরুণীকে হত্যার অভিযোগে পুলিশ সদস্যসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
রাজশাহীতে ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধারকৃত তরুণীর লাশের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। পিবিআই সদস্যরা ওই তরুণীকে খুনের অভিযোগে পুলিশ সদস্য নিমাই চন্দ্র সরকারকে (৪৩) গ্রেপ্তার করে। তার বাড়ি পাবনার আতইকুল্লা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামে। তিনি রেল পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত। এর আগে তিনি মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
রাজশাহী পিবিআইয়ের একটি টিম শনিবার রাতে নাটোরের লালপুরে বোনের বাড়ি থেকে নিমাইকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন: ডোবায় ভাসমান ড্রামের ভেতর মিলল তরুণীর লাশ
পরে তিনি নিহত তরুণীর পরিচয় জানায় এবং তার দেয়া তথ্যে রবিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাস চালকসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
বাকি আটককৃতরা হলেন- নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়ার কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাসের চালক নগরের বিলশিমলা এলাকার আবদুর রহমানকে (২৫)
নগরীর শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, হত্যাকাণ্ডটি সূত্রহীন ছিল। তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পিবিআই তার আঙুলের ছাপ নেয়। আঙুলের ছাপ থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে তার জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। সেখান থেকে তার ঠিকানা বের করে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। আর পুলিশ ননিকার হত্যাকারী হিসেবে নিমাইকে শনাক্ত করে। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সহযোগী হিসেবে কবির আহম্মেদ, সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাসের চালক আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে মাইক্রোবাসে লাশ নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়া হয়, সেটিও জব্দ করা হয়েছে।
ওসি জানান, গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই পিবিআইয়ের হেফাজতে আছেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করবে।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে শিশুর ভাসমান লাশ উদ্ধার
নিহত ওই তরুণীর নাম ননিকা রাণী রায় (২৪)। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁ সদরের মিলনপুর। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে সদ্য অধ্যয়ন শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি ক্লিরিকে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নগরের পাঠানপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন ননিকা। রবিবার রাতে তার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে হেরোইনসহ আটক ১
পিবিআই জানায়, নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ওই তরুনীকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়িটি জিআরপির কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র গত ৬ এপ্রিল ভাড়া নেয়। তার স্ত্রীও পুলিশ কনস্টেবল। সে বগুড়ায় কর্মরত। রোববার বিকেলে পিবিআই সদস্যরা ওই বাড়িতে তদন্তে যায়।
পিবিআই জানায়, কনস্টেবল নিমাই হত্যার কথা স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে ৬/৭ বছর ধরে ননিকা রাণীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়। সম্প্রতি তিনি বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এ কারণে তাকে হত্যার পর ড্রামে লাশ ভরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়।
সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও পুলিশ সূত্র জানা গেছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার নগরীর অদূরে বাইপাস সড়কের সিটি হাটের কাছে একটি ডোবায় ড্রামের মধ্যে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে শাহমখদুম থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।