দুই মাস আগে রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন যশোরের কামরুল হাবিব রকি (২২)। কর্মরত ছিলেন ঢাকার বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে।
বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে আগুন লাগে। আটকা পড়ে মারা গেছেন রকি। দুই মাস পর তিনি বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে। শোকের মাতম চলছে সদর উপজেলার ধোপাখোলায় তার গ্রামের বাড়িতে।
শুক্রবার (১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তার মৃতদেহ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে। তার মৃত্যুর সংবাদে স্বজন, প্রতিবেশীরা ভিড় করেন একনজর দেখার জন্য। তাদের আহাজারি, কান্নায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত রকির ভাই কামরান হোসেন সাজিম বলেন, ‘তার ভাই মাদরাসা থেকে আলিম পাশ করে গত ডিসেম্বর মাসে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি নেন। বৃহস্পতিবার সেখানে কর্মরত অবস্থায় ভবনটিতে আগুন লাগে। তিনি ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ বাড়িতে এসেছে।’
আরও পড়ুন: বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: ভোলার দুই যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া
তিনি আরও বলেন, আমাদের ৩ ভাইয়ের মধ্যে রকি সবার বড়। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিল। বাবা ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান। তাদের দুইজনের আয়ে আমাদের সংসার চলতো। ভাইকে এভাবে হারাতে হবে কখনো কল্পনাই করিনি।
রকির মামা জিহাদ হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে রকির ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়েছিলাম, সে রিসিভ করেনি। পরে আমাকে কল ব্যাক করে বাঁচানোর আকুতি জানায়। আমাকে বলে মামা আমাদের ব্রাঞ্চে (কাচ্চি ভাই, বেইলি রোড শাখা) আগুন লাগছে। আমি আটকা পড়ছি। আমাকে বাঁচাও। কিছুক্ষণ পর কল কেটে যায়। আমি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। তারা জানায়, উদ্ধার কাজ চলছে, ধৈর্য ধরুণ। এরপর আমি ঢাকায় রওনা হই। সেখানে গিয়ে হাসপাতালে পাই রকিকে। ততক্ষণে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ৩ জন আটক
তিনি বলেন, ‘আমিই রকিকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম। ওর চাকরি হওয়ার পর আমিই তাকে ঢাকা চিনিয়েছি। গত ডিসেম্বরে রকি চাকরিতে ঢুকেছে। আজ ওর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।’
এদিকে, রকির বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারী হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশীরাও রকির স্মৃতিচারণ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। রকির মা রিপা বেগম ও বাবা কবির হোসেন সন্তানের শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
বাদ জুম্মা ধোপাখোলা গ্রামের মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় রকিকে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: ৪৬টির মধ্যে ৩৯টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর