কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গাজীকালু-চম্পাবতী মেলার আয়োজনকে কেন্দ্র করে জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিএনপির আহতরা হলেন— খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, গফুর শেখের ছেলে সুকুর শেখ, আজিজুলের ছেলে শরীফ, আসাকুর রহমান। তারা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
জামায়াতের আহতরা হলেন— জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মহেন্দ্রপুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, জামায়াতের কর্মী কুদ্দুস প্রামাণিক (৭০), শহিদুলের ছেলে তুহিন হোসেন, আক্কাস আলীর ছেলে জিহাদ হোসেন, সুকচাঁদের ছেলে জামাত আলী, জালালের ছেলে ইউনুস আলী। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড়শ বছর ধরে হোগলা চাপাইগাছি বাজারে গাজীকালু-চম্পাবতী মেলার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয়রা। ১৭ মে থেকে ঐতিহ্যবাহী গাজীকালু-চম্পাবতী মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় অংশ নিতে এসেছিলেন। তবে মেলায় অশ্লীলতা ও জুয়া খেলার অভিযোগ তুলে জামায়াত ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মেলা বন্ধের দাবি জানান। অন্যদিকে, প্রশাসনের অনুমতি না থাকলেও বিএনপি সমর্থকরা মেলা কমিটি আয়োজন অব্যাহত রাখেন। এ নিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) বিকাল থেকে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ কয়েক দফা টহল দিলেও সন্ধ্যার পর সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় লাঠি, রামদা, হাঁসুয়া নিয়ে অন্তত ৩০টি দোকানে হামলা চালানো হয়। এ সময় দোকান ভাঙচুর ও মালামাল লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জামায়াতের পক্ষে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেলায় অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়ার আয়োজন ছিল। এজন্য প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তবুও বিএনপির মেলা কমিটি আয়োজন চালিয়ে যায়। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের ওপর হামলা হয়।’
অন্যদিকে, বিএনপিপন্থী প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, ‘জামায়াতের শত শত কর্মী আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। আমরা থানায় মামলা করব।’
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে মোটরসাইকেল-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৩
বাজারের কলা ব্যবসায়ী নাদের শেখ বলেন, ‘শত শত বছর ধরে মেলা হয়ে আসছে। আজ দেখলাম দুপক্ষের দাবড়া-দাবড়ি। জামায়াতের লোক বেশি ছিল। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।’
চাটমোহর থেকে আসা ব্যবসায়ী আরজ আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সন্ধ্যার আগে টুপি পরা লোকেরা হুমকি দিতে আসে। পরে রামদা, হাঁসুয়া, লাঠিসোঁটা নিয়ে দোকানে হামলা চালায়। দোকানে থাকা প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল লুট হয়ে গেছে।’
জামায়াতের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসাইন বলেন, ‘ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জামায়াতের নেতা-কর্মী ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে মেলা কমিটির লোকজন হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে থানায় মামলা করা হবে।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, ‘মেলায় প্রশাসনিক অনুমতি ছিল না। সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’