মাস ছয়েক আগে যশোর শহরের আরবপুর এলাকায় তার নিজ বাড়ির পাঁচ শতক আর গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদাহের কালীগঞ্জের হাসানহাটিতে তিন বিঘা জমিতে চুইঝাল চাষ করেছেন তিনি। সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে তার এই উদ্যোগ।
এই ক্ষেত থেকে বছর খানেক পর ১০ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।
আরও পড়ুন: খুলনার চুইঝালের কদর দেশজুড়ে, মিলছে অনলাইনেও
আরজান আলী বলেন, লক্ষ নির্ধারণ করে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার জন্যই তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি জানান, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছয় মাস আগে তিনি খুলনার ডুমুরিয়া থেকে চুইঝালের চারা সংগ্রহ করেন। পরে শহরের আরবপুরে তার নিজ বাড়ির পাঁচ শতক জমিতে চাষ শুরু করেন। এতে সফল হয়ে বর্তমানে গ্রামের তিন বিঘা জমিতে এই সুস্বাধু মসলার গাছের চাষ করছেন তিনি। বছর খানেক পর এই চাষ থেকে ১০ লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশাবাদী তিনি।
শিক্ষিত বেকারদের অনুপ্রেরণা দিতে এই অনন্য উপায় তুলে ধরেছেন শিক্ষক আরজান আলী।
তিনি আরও বলেন, প্রায়ই শিক্ষার্থীদের আকুতি শুনতে হয় তাকে। তাদের অনেক ধরণের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী বলে স্যার পড়াশোনা শেষ, চাকরি নেই। কোনো উপায় পাচ্ছে না তারা। অনেকেই হতাশায় ভেঙে পড়ে। তারা বলে থাকে এতো পড়াশোনা করে শেষ মেষ কৃষক হতে হবে? তাদের এই ধারণা থেকে তুলে আনতে আরজান আলীর এই উদ্যোগ।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আমি যদি পারি তবে তোমরা কেন নয়। কোনো কাজকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। কাজ তো কাজই। এই বিষয়টি মাথায় রেখে নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উদ্যোক্তা হতে হলে প্রথমে ছোট কাজ দিয়েই শুরু করতে হয়। কে কি ভাববে তা না ভেবে নিজের ভাবনাকে সামনে এনে আগাতে হবে। না হলে সফলতা আসবে না।
আরজান আলী জানান, চুইঝাল চাষে খরচ কম হওয়ায় এটা বেছে নিয়েছেন তিনি। এটা একটি স্বাস্থ্যকর ঔষধি মসলা। ক্রেতা ও ভোক্তাদের আগ্রহ অনেক এই মসলার প্রতি। তাছাড়া বাণিজ্যিক দিক দিয়ে এর চাহিদা অনেক। চুইঝাল চাষ অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় ঝুঁকি কম ও লাভজনক হওয়ায় এই চাষকেই বেচে নিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা কৃষিকে দিয়েছেন নতুন দিগন্ত: কৃষিমন্ত্রী
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বাগেরহাট, খুলনা, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা এলাকায় জনপ্রিয় একটি ঝাল হলো চুইঝাল। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ঝাল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চুই লতা জাতীয় গাছ। এর কান্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো। দেখতে সবুজ রংয়ের। চুইঝাল খেতে ঝাল হলেও এর রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুণ। চুইলতার শিকড়, কান্ড,পাতা, ফুল-ফল সবই ভেষজ গুণ সম্পন্ন। এছাড়াও সমলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাঁসের মাংস, খাসির মাংস ও গরুর মাংস রান্না করতে। খাবারের রুচি বাড়াতে ও ক্ষুধা মন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে চুইঝাল। ক্যানসার, হৃদরোগ প্রতিরোধে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। পাকস্থলীর সমস্যা দূরীকরণ, স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে।
আরও পড়ুন: খামারিদের দেয়া সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: কৃষিমন্ত্রী
নিঃসন্দেহে বলা যায় যে মরিচের বিকল্প হিসেবে ভেষজ গুণ সম্পন্ন এই চুইঝালের জনপ্রিয়তা বাড়লে দেশের মানুষ অনেক জটিল রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। এছাড়াও আর্থিক দিক থেকেও দেশ অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবে।
যশোরের বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি চুইঝাল ৩০০ টাকা থেকে শুরু