চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের (২৫) দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজার অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আবু সাঈদ।
জানাজায় ইমামতি করেন আবু সাঈদের আত্মীয় মো. সিয়াম মিয়া।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আবু সাঈদের লাশ তার গ্রামে পৌঁছায়। এরপর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোক আর কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন পেশায় একজন দিনমজুন। অর্থাভাবে কোনো ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি।
আবু সাঈদ ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সাঈদ। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মা ও ভাইবোনদের। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির।
নিজ প্রচেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন সাঈদ। মেধা ও আচরণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিলেন তিনি।
এদিকে, ছেলেকে হারিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা মনোয়ারা বেগম।
এলাকাবাসী জানায়, ছোট থেকেই আবু সাঈদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তার ব্যবহারে তার প্রতি সবাই মুগ্ধ ছিল। তিনি স্থানীয় জুনুদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। পরে এলাকার খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকেও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন আবু সাঈদ। বেঁচে থাকলে তিনি জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: প্রশাসনের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান, ঢাবিতে সংঘর্ষ
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে বেরোবিতে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এতে নিহত হন আবু সাঈদ।