শেরপুরে গারোদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী ‘ওয়ানগালা’ বা নবান্ন উৎসব। প্রতি বছর শীতের আগে সাধারণত এই উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) ও রবিবার ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
সাধারণত নতুন ফসল ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হিসেবে ‘ওয়ানগালা’ উদযাপন করা হয়।
আয়োজকরা জানান, ১৯৮৫ থেকে মরিয়মনগর ধর্মপল্লীতে ওয়ানগালা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষে ধর্মপল্লী প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এবারই প্রথম দুদিনব্যাপী ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, শনিবার অনুষ্ঠানের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়েছে গারোদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উৎসব। আগামীকাল (রবিবার) ওয়ানগালার মুল অনুষ্ঠান হবে, যেখানে শস্য দেবতকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য নেচে গেয়ে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব উদযাপন করা হবে। একইসঙ্গে ভালোবাসা ও মঙ্গল কামনা করা হবে যীশুর কাছে।
আরও পড়ুন: শেরপুরে দুই দিন ধরে হবে ‘ওয়ানগালা’ উৎসব
ঝিনাইগাতী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (টিডব্লিওএ) সাধারণ সম্পাদক অসীম ম্রং বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উৎসবে ২০টি স্টল দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টিতে খাবার তৈরি ও বিক্রি করা হবে এবং বাকি ৪টিতে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে।’
‘এসব স্টলে পিঠা, পুলি, শামুক, শিমুল আলু, কুচিয়া মাছ, চু পানীয়, হাঁস-মুরগি, শুকরের মাংস ও রান্নাকরা খাবারসহ অর্ধশতাধিক ঐতিহ্যবাহী খাবারের আইটেম স্থান পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উৎসবে আগতরা ঐতিহ্যবাহী এসব স্বাদ গ্রহণ ছাড়াও বাড়ির লোকদের জন্য এগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেবল গারোরাই নয়, অন্যান্য জাতি গোষ্ঠির লোকজনও এ খাদ্য উৎসবে এসেছেন এবং গারোদের ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে জেনেছেন।’
ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর বেশিরভাগই মশলাপাতি ছাড়া রান্নাবান্না হওয়ায় এটা অনেক সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত বলে জানান তিনি।
আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব রনু নককে বলেন, ‘আমাদের এ আয়োজনে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এগিয়ে এসেছে। এবার আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। আশা করছি, সামনের দিনেও এটি অব্যাহত থাকবে।’
‘ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উৎসব উপলক্ষে খাবার প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিক্রি ও রান্নার প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন বয়সিদের জন্য নাচ, গান এবং নানা ধরনের খেলাধুলা ও পুরস্কার ব্যবস্থা আছে।’
আরও পড়ুন: শেরপুরে গারোদের ‘ওয়ানগালা’ উৎসব উদযাপন
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের চ্যান্সেলর ফাদার বাইওনেল চাম্বুগং প্রধান অতিথি হিসেবে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের উদ্বোধন করেন।
এ সময় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সদস্য সচিব রনু নককে প্রধান অতিথির মাথায় সম্মানসুচক ‘খামাল’ (প্রধান নেতার) মুকুট পরিয়ে দেন।
প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় বলেন, এই উৎসব গারোদের ঐহিত্য রক্ষায় ভুমিকা রাখবে এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ট্যুরিজম বোর্ডের উপ-সহকারী পরিচালক শাহ মোকাদ্দিম হোসেন, এসআইএল বাংলাদেশের এলাকা ব্যবস্থাপক সুজল সাংমা ও রনু নককে।
আরও উপস্থিত ছিলেন সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর ফাদার নিকোলাস বাড়ৈ, ফাদার লরেন্স রিবেরু, ঝিনাইগাতী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে সাধারণ সম্পাদক অসীম ম্রং।