জীবনের সবটাই ব্যয় করেছেন যে সন্তানদের জন্য আজ তাদের কারোর ঘরেই ঠাঁই হলো না ৯০ বছর বয়সী কমলা খাতুনের। স্বামীর লিখে দেয়া সম্পত্তি নিয়ে বিরোধেই তার ঠাঁই হলো গোয়াল ঘরে। গোয়াল ঘরের এক কোনে একটি চৌকিতে নিশ্চল দেহ ও চোখে নানা প্রশ্ন নিয়ে পড়ে আছেন এই অশীতিপর বৃদ্ধা।
সম্প্রতি এ অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের মশৈাদী গ্রামের ২ নং ওর্য়াডের গাজী বাড়িতে।
বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজেমিনে দেখা যায়, শীতে কষ্ট পাচ্ছেন মা কমলা খাতুন। অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছেন। কাউকেই কিছু বলতে পারছেন না। অথচ অনেক কিছু বলতে চান, চোখের দিকে তাকালে এমনটাই মনে হয়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে বিদ্যালয়ের মাঠেই জন্ম নিল নবজাতক
ওই ওয়ার্ডের চান খাঁ মসজিদ সংলগ্ন গাজী বাড়ির মৃত আবদুল গণি গাজীর স্ত্রী কমলা খাতুন। তিনি তিন ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানের জননী। দুই ছেলে কৃষক হলেও স্বচ্ছল। একজন মানসিক রোগী। মেয়ে তিনজনের মধ্যে রাজিয়া নামের কন্যা পিত্রালয়েই থাকেন। তিনি তালাকপ্রাপ্তা। মৃত্যুর আগে বাবার কাছ থেকে দেড় শতাংশ ভূমি ক্রয় করেন। একই দলিলে স্ত্রী কমলা খাতুনকে দেড় শতাংশ সম্পত্তি লিখে দেন মৃত আব্দুল গণি। এই সম্পত্তি নিয়েই ভাই-বোনের মধ্যে যত বিরোধ।
বাবার মৃত্যুর পর বড় ছেলে মফিজ ও শফিক মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিলেও সম্প্রতি মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা বোনের ঘরের পাশে গোয়াল ঘরে নিয়ে রাখেন। এরপর বিষয়টি জানানো হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে। বর্তমানে কমলা খাতুন ওই গোয়াল ঘরেই আছেন।
দুই ছেলে ও ছেলের বউয়ের দাবি, মায়ের সম্পত্তির জন্য দুই বোনের পরামর্শেই গোয়াল ঘরে নিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে বাবার মৃত্যুর পর ছেলেরা মায়ের দায়িত্ব নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে বড় মেয়ে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মশৈাদী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম পাটোয়ারি জানান, মৃত আবদুল গণির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ অনেকদিনের। তাদের বিরোধের কারণেই মা কমলা খাতুনকে গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে। আমি তাদেরকে ডেকে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছি। সুরাহা না হলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।