নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) নগরীর আখালিয়াস্থ নেহারী পাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।
আহত অবস্থায় রায়হানকে উদ্ধার করে ওসমানীতে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলেও মৃত যুবকের পরিবার বলছে পুলিশ হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম ও চাচা হাবিবুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, বাসায় ফিরতে দেখে শনিবার রাত ১০টায় রায়হানের মোবাইলে ফোন দেন মা ও স্ত্রী। কিন্তু ফোন বন্ধ পান। পরে ভোর রাত ৪টা ২৩মিনিটের দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে রায়হান জানায় পুলিশ তাকে ধরে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছে। এখন তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। টাকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিবে।
এ কথা শুনে রায়হানের মা তার চাচাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ রবিবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে টাকা নিয়ে ভাতিজা রায়হানকে ছাড়িয়ে আনতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যান।
রায়হানের চাচার ভাষ্য অনুসারে, এ সময় সাদা পোশাকে ফাঁড়িতে থাকা এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা। আপনি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে আসলেন কেন? চলে যান, রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও ফাঁড়িতে নেই। আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল ৯টার দিকে আসেন। আসলেই তাকে নিয়ে যেতে পারবেন। তাকে আমরা কোর্টে চালান করব না।’
এ কথা শুনে রায়হানের চাচা বাসায় চলে যান এবং পরে সকাল ৯টার দিকে টাকা নিয়ে ফের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান।
এ সময় পুলিশ সদস্যরা জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল ৭টার দিকে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খবরে হাবিবুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে তৎক্ষণাৎ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিকেল ৩টার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
রায়হানের চাচা বলেন, ‘তাকে পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটের শাহজালাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করত।’
এদিকে ‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় লোকজন রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর পুলিশ গিয়ে তাদেরকে শান্ত করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
অন্যদিকে রবিবার ভোরে রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ছিনতাই কালে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তোলার পর তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
সিলেট কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র বলেন, ‘এখনো নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, ‘রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে পুলিশের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’