সিলেট নগরীর চিহ্নিত ২৩টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো আগামী সপ্তাহ থেকেই ভাঙার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে নগর ভবনে অনুষ্ঠিত `ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি ও পরবর্তী করণীয়’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন-নবী। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে এখনো অনেক মানুষ বসবাস ও ব্যবসা করছেন, যা বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করছে। নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থেই দ্রুত ভবনগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, নগরের সংকীর্ণ রাস্তাগুলো দুর্যোগের সময় উদ্ধার কাজ ব্যাহত করতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ কাজে নেতৃত্ব দেওয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, আমাদের দল নগরের ৬ হাজার ভবন জরিপ করে ২৩টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পেয়েছি।
তবে প্রকৃত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এই অধ্যাপকের মতে, ‘নগরে এখন প্রায় ৪৪ হাজার ভবন আছে। প্রতিটি ভবন সার্ভে না করলে সঠিক ঝুঁকি নিরূপণ করা সম্ভব নয়।’
জানা যায়, ২০১৯ সালের ভূমিকম্পের পর এসব ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশনা থাকলেও রহস্যজনক কারণে সিসিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেটসহ সাতটি শপিং সেন্টার ১০ দিন বন্ধ রেখে কেবল রঙের কাজ শেষে পুনরায় চালু করা হয়। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও তালিকাভূক্ত বহু ভবন এখনও অতি ঝুঁকির তালিকায় রয়ে গেছে।
সিসিকের তালিকাভুক্ত অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হচ্ছে:
১. কালেক্টরেট ভবন-৩, ২. সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, ৩. মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয়, ৪. সুরমা মার্কেট, ৫. সিটি সুপার মার্কেট, ৬. মিতালী ম্যানশন, ৭. আজমীর হোটেল, ৮. মধুবন মার্কেট, ৯. মান্নান ভিউ, ১০. শুভেচ্ছা-২২৬, ১১. চৌকিদেখী ৫১/৩ সরকারি ভবন, ১২. নবপুষ্প-২৬/এ, ১৩. রাজা ম্যানশন, ১৪. কিবরিয়া লজ, ১৫. মিতালী-৭৪,১৬. মেঘনা-এ-৩৯/২, ১৭. পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮. ওয়ারিছ মঞ্জিল, ১৯. হোসেইন মঞ্জিল, ২০. শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, ২১. নূরানি-১৪, ২২. পৌর বিপণি ও শপিং সেন্টার, ২৩. লেচুবাগান এলাকার প্রভাতী ও শ্রীধরা হাউস।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে। যেসব ভবনে পূর্বে সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর কাগজপত্র পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।