খুলনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে গত ১৫ বছরে খুলনায় ইলিশের উৎপাদন প্রায় ২২ গুণ বেড়েছে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, কার্প জাতীয় (ফিন ফিশ) মাছ, ক্যাট ফিশ (মাগুর ও শিং জাতীয়), কাঁকড়া, কুচিয়া ও শুঁটকির উৎপাদনও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
খুলনা জেলার মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের নানান পদক্ষেপের ফলে এই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মৎস্য উৎপাদন বেড়েছে। এর ফলে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৎস্য রপ্তানিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে খুলনা।
এতে স্থানীয়দের জীবনমানেরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেড় দশক আগে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে খুলনায় ইলিশ আহরণ হয় ১১৫ টন। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ২ হাজার ৫৫৫ টনে উন্নীত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে চিংড়ির উৎপাদনও। ২০০৬-০৭ বাগদা, গলদা, হরিণাসহ বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি উৎপাদন হয় ১৮ হাজার ২৫৫ টন। আর সবশেষ অর্থবছরে ২০২২-২৩ তা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৩৭৫ টনে।
আরও পড়ুন: খুলনায় পুকুরে ধরা পড়ল ২০ ইলিশ
একইভাবে বেড়েছে কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদনও। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এ ধরনের মাছের উৎপাদন ছিল ৬৬ হাজার ২৬৫ টন। আর সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা উন্নীত হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৫০ টনে। ক্যাট ফিশের উৎপাদন ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা উন্নীত হয়েছে ১২ হাজার ৮২৫ টনে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে কাঁকড়ার উৎপাদন ছিল ৪ হাজার ২৫০ টন। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা উন্নীত হয়েছে ৭ হাজার ৮৬০ টনে। এই অঞ্চলে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে কুচিয়ার উৎপাদন ছিল ২৩ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ টনে।
খুলনার জেলেরা ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করেছেন ৬৮৯ টন, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৩ টনে। সুন্দরবন এলাকায় ২০০৬-০৭ অর্থবছরে মাছ আহরণ হয়েছিল ৫৭৭ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৫ টনে।
এ ছাড়াও এই অঞ্চলে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে শুঁটকির উৎপাদন ছিল ২১৮ টন, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে ১ হাজার ১৭০ টনে দাঁড়িয়েছে।
খুলনার মৎস্য অফিসের দাবি, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ও জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে মৎস্য উৎপাদন বিপুল পরিমাণ বেড়েছে। করোনাকালে মৎস্য উৎপাদন সহনশীলমাত্রায় রাখতেও পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার। করোনার প্রভাবে খুলনা জেলায় ৯ হাজার ৮৬৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিকে ১৪ কোটি ৭৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, যা মৎস্য উৎপাদন ও আহরণ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, মাছের সুষ্ঠু প্রজনন নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে দুই মাসের জন্য মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার, যা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির একটি কার্যকর পদক্ষেপও বটে।
চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে সরকার একটি ক্লাস্টার সিস্টেম চালু করেছে এবং ইতোমধ্যে আর্থিক সহায়তার জন্য খুলনা জেলায় ৯৪টি ক্লাস্টার তৈরি করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, মৎস্য খাতের উন্নয়নে সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং চিংড়ি চাষে পাইলট প্রকল্পটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের জন্য দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিসহ সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে ইলিশের উৎপাদনও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে সরবরাহ বাড়লেও ইলিশ এখনও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে